Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ময়মনসিংহে রেলে বাড়ছে লাশের মিছিল, অরক্ষিত ক্রসিং

Icon

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২২, ১৭:১৫

ময়মনসিংহে রেলে বাড়ছে লাশের মিছিল, অরক্ষিত ক্রসিং

ময়মনসিংহের অরক্ষিত রেলক্রসিং। ছবি: ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহে রেলে একের পর এক দুর্ঘটনায় বাড়ছে লাশের মিছিল। চলতি বছরে ৩১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে অসাবধানতার কারণেই রেলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনা রোধে অরক্ষিত রেলক্রসিং সংরক্ষণের পাশাপাশি লোকবল নিয়োগের দাবি নাগরিক নেতাদের।

রেল বিভাগের তথ্য মতে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলে ২০০টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে অরক্ষিত ১০৫ টি। ৭০টির মতো লেভেল ক্রসিংয়ে তিনজন করে গেইটম্যান থাকলেও বাকিগুলোতে রয়েছে লোকবল সংকট। ট্রেন চলাচলের সময় লেভেল ক্রসিংগুলোর দুই পাশে গেইট ব্যারিয়ার ফেলে যানবাহন আটকানোর কথা থাকলেও একপাশে ফেলা হচ্ছে ব্যারীয়ার। এতে ট্রেন সন্নিকটে আসলেও ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেখা যায়। এসব কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। একের পর এক দুর্ঘটনায় চলতি বছরে ময়মনসিংহ রেলে ৩১ জনের প্রাণ গেছে। 

নগরীর মিন্টু কলেজ লেভেল ক্রসিংয়ে দিয়ে পারাপারকারী আবু আসলাম বলেন, ময়মনসিংহ নগরী এমনেতেই যানজটের নগরী। ট্রেন আসার কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে গেইট ব্যারীয়ার ফেলা হয়। এতে আমরা সাধারণ মানুষ খুব অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। পরে ঝুঁকি নিয়ে রেড জোন দিয়ে চলাচল করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট পূর্বে গেইট ব্যারীয়ার ফেললে কারো সমস্যা হয় না। 

নাটক ঘরলেনের রাসেল মিয়া বলেন, জুলাই মাসের ২৫ তারিখ রেললাইন হেঁটে পার হওয়ার সময় মাঈন উদ্দিন নামে একজন কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আমরা সচেতন না হলে শুধু কর্তৃপক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না। 

পাটগুদাম ব্রিজমোড় লেভেল ক্রসিংয়ের গেইটম্যান আতিকুল হক বলেন, গত তিন বছর ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে একটি গেইট ব্যারীয়ার অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ট্রেন সন্নিকটে আসলেও একটি ব্যারীয়ার তুলে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করে। তাদের কিছু বললেও সমস্যা। আর দুটি ব্যারীয়ার থাকলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার পাশাপাশি ট্রেন নির্বিঘ্নে চলতে পারে। 

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ের গেইটম্যান আতিকুর রহমান বলেন, এই লেভেল ক্রসিংটি স্টেশনের কাছে হওয়ায় ট্রেনের একটু চাপ বেশি। তিনজন গেইটম্যানের বদলে আমরা দুইজন রয়েছে। প্রত্যেকে ১০ ঘণ্টা করে ডিউটি করি। বাকি চার ঘণ্টা অনেক সময় কেউ থাকে না। কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন ওই সময়টাতে অন্য একজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। আমরা জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করি যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। 

রেলওয়ে থানা ময়মনসিংহের উপ-পরিদর্শক মির্জা মো. মুক্তা বলেন, চলতি বছরে ময়মনসিংহের অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।  এছাড়া রেল দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহে ২০২০ সালে ৩৬ জন এবং ২০২১ সালে ৪২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৮টি। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ময়মনসিংহে চলতি বছরে রেলে ৩১ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি মোট লেভেল ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ অরক্ষিত এটা দুঃখজনক ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রায় শুনা যায় ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তাহলে আমরা কেন সচেতন হচ্ছি না। রেল হচ্ছে নিরাপদ জার্নি আর সেটি যদি অনিরাপদ হয় তাহলে রেল বিভাগের কর্তৃপক্ষ কি করেন? আমাদের দাবি প্রত্যেকটি লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা দ্রুত জোরদার করা হোক। আমরা আর কোন তরুণ মেধাবীদের হারাতে চাই না। 


বাংলাদেশ রেলওয়ে ময়মনসিংহের সহকারী প্রকৌশলী নারায়ন প্রসাদ সরকার বলেন, রেলওয়ের ময়মনসিংহ জোন হচ্ছে ময়মনসিংহ থেকে শ্রিপুর, বিদ্যাগঞ্জ, মোহণগঞ্জ, আঠারোবাড়ি, জারিয়া জাঞ্জাইল। এই এরিয়ার মধ্যে ২০০টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে ১০৫টি অরক্ষিত। বাকি ৯৫টির মধ্যে ৭০টিতে তিনজন করে গেইটম্যান রয়েছে। ২০টি লেভেল ক্রসিংয়ে দুই পাশে গেইট ব্যারিয়ার আছে। বাকিগুলো এক পাশে রয়েছে। এতে ট্রেন আসলে একটু ধৈর্য না ধরে পারাপারের চেষ্টা করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে গেইটম্যানরাও দায়ী। 

তিনি আরো বলেন, অরক্ষিত ২০৫টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫০টির মতো পাকা সড়ক রয়েছে। সেগুলো এলজিইডির প্রতিনিধি দল নিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে গেইট ব্যারিয়ার, গেইটম্যান এবং ঘুমটিঘরের জন্য সিদ্ধান্ত চলমান রয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা কাম্য নয় রেল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হবে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫