Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

গণপূর্ত প্রকৌশলী রোকনের দুর্নীতি-অবৈধ সম্পদের তদন্তে দুদক

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২, ১৪:৫৫

গণপূর্ত প্রকৌশলী রোকনের দুর্নীতি-অবৈধ সম্পদের তদন্তে দুদক

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন একসাথে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। সেই সাথে নিজ দপ্তরে নামে-বেনামে ব্যবসা করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন তিনি। অবৈধভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়েছেন বিদেশে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়েরকৃত অভিযোগে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, জিকে শামীমকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম সিন্ডিকেটের ১১ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এ কারণে জিকে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় অন্যান্যদের সাথে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, আব্দুল মোমেন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মো. ফজলুল হক, আব্দুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, মো. ইলিয়াস আহমেদ, ফজলুল হক, গণপূর্ত-৪ সার্কেলের তৎকালীন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দুদক পরিচালক (বিশেষ অনুঃতদন্ত-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর আগে জিকে শামীম কানেকশনে রোকন উদ্দিনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। কারণ জিকে শামীমকে সবচেয়ে বেশি টাকার কার্যাদেশ দেন রোকন উদ্দিন। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় জিকে শামীমের মামলায় রোকন উদ্দিনের তেমন কিছুই হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের পৃথক অভিযোগ। প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের ফাইলটি কোনো পর্যায়ে রয়েছে-জানতে চাইলে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, ফাইলটি দেখে আপডেট জানাতে পারবো।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সার্কেল-৩-এ যোগ দেন। এর আগে তিনি বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। আগারগাঁও অফিসে যোগদান করেই তিনি তার শ্যালক মো. সাইফুল আলমের নামে লাইসেন্স নেওয়া ‘মমতা ট্রেডার্স’র এবং ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন মিটুর নামে লাইসেন্স নেওয়া ‘মুন্সি ট্রেডার্স’কে কার্যাদেশ দেন। এ দুইটি মূলত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনেরই বেনামি প্রতিষ্ঠান। এখানকার দায়িত্বে এসে শুধু মহাখালী ডিভিশন থেকেই প্রতিষ্ঠান দুইটিকে কয়েকশ’ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেন। 

এর মধ্যে শেরেবাংলা নগরে দুইটি প্যাকেজে ১৮ কোটি টাকা, তিনটি প্যাকেজে পাঁচ কোটি টাকা এবং আরো একটি প্যাকেজে আট কোটি টাকার কার্যাদেশ দেন। এখান থেকে তিনি নিজের বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় করে নেন।

এর আগে রোকন উদ্দিন ছিলেন বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী। সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক ঠিকাদার রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ঘুষ ছাড়া কাউকে কোনো কার্যাদেশ দেন না। ঘুষ না দিলে টেন্ডার নোটিশ গোপন করে বাগেরহাটের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেন। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল বাগেরহাট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জাহিদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক শেখ জাহিদুর বারী রোকন উদ্দিনের বিভিন্ন দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।


অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) তালিকায় বাগেরহাট পিডব্লিউডি’র তালিকায় ৯২টি কাজ ছিল। নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে কার্যাদেশ দেন। বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধা অফিসের এলটিএম পদ্ধতিতে একটি গ্রুপ টেন্ডার করে তিনটি কার্যাদেশ দেন ঢাকার মেসার্স এস. কে পাওয়ার সার্ভিসকে। ২০১৪-১৫ সালে বাগেরহাট পিডব্লিউডির অনেক কার্যাদেশ দেন একই প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদার শেখ জাহিদুল বারী অভিযোগ করেন, বাগেরহাট গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে রোকন উদ্দিন যোগদানের পর তিনি পিকনিকের জন্য আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিনিময়ে তিনি আমাকে ছয়টি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কথামতো তাকে প্রথম ৮০ হাজার টাকা দিই এবং তিনি আমাকে দুইটি কার্যাদেশ দেন। পরে আরো চারটি কাজের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও আর কোনো কাজ দেননি। আমার টাকাও ফেরত দেননি।

বাগেরহাটের ঠিকাদার আলমগীর কবির প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে আর কার্যাদেশই দেননি। প্রচণ্ড অর্থকষ্টে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করেন। ঠিকাদারি পেশায় তিনি এখন পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেননি। আলমগীর কবির ভুক্তভোগী আরো ১০ ঠিকাদারের স্বাক্ষর নিয়ে রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গণপূর্ত সার্কেল, খুলনা বরাবর দাখিল করায় তিনি এই রোষানলের শিকার হন।

অভিযোগের তথ্য মতে, অস্ট্রেলিয়ায় রোকন হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠিয়েছেন। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান বসবাস করছেন। রোকন উদ্দিন নিজেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ওই পাসপোর্টে তার নাম মুন্সি মো. রোকন উদ্দিন। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের তার অফিসিয়াল পাসপোর্টের ভিত্তিতে। ফলে দুদকের নিষেধাজ্ঞার পরও তিনি একাধিকবার অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করেন। গত আট বছর ধরে তিনি দুইটি পাসপোর্টই ব্যবহার করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের সাথে গতকাল রবিবার (৩১ জুলাই) যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। 

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অভিযোগে ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ এবং অর্থ পাচারের উপকরণ থাকলে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। দুদক নিশ্চয়ই সেটি খতিয়ে দেখবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫