নদী গিলছে বসতভিটা
অন্ধকার নামলেই মরণ ভয়

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২২, ১৪:২০

উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন নদীভাঙন কবলিত শত শত মানুষ। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
পরিবার নিয়ে নদীর পাশে সুখের নীড় গড়ে তুললেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নদীভাঙন। চোখের সামনেই নদী প্রতিনিয়তই গিলছে কষ্টের গড়া বসতভিটা। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন নদীভাঙন কবলিত শত শত মানুষ।
জমিরুন নেছা (৫০) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিসকা গ্রামের বাসিন্দা। জন্মের পর থেকেই এখানে বসবাস করছেন। পাহাড়ি ঢলে চোখের সামনেই নিজের ঘর বৌলাই নদীতে বিলীন হওয়ার পথে; কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে আজও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
দিনের বেলা সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাটালেও বেলা শেষে অন্ধকার নামলেই চলে আসে মরণ ভয়। নদীভাঙনের তীব্রতা যে হারে বাড়ছে, চিন্তা হয় কখন যেন ঘুমের মধ্যে পরিবারসহ স্বপ্নের নীড় চলে যায় নদীতেই- এই ভেবেই উৎকণ্ঠা নিয়ে কথাগুলো বলেন বৌলাই নদী পাড়ের বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধুতমা গ্রামের বাসিন্দা। বন্যার পর নদীভাঙনের কবলে দিশেহারা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও বৌলাই নদীর তীরবর্তী জনপদের পাঁচ শতাধিক পরিবারের মানুষ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ও সচেতন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হতদরিদ্র পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক বসতভিটায় বড়-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীতে বিলীন হওয়ার পথে তাহিরপুর-আনোয়ারপুর-সুনামগঞ্জ সড়কটিও। ভাঙন অব্যাহত থাকায় কখন যেন তাদের ডাক আসে নদীতে চলে যাওয়ার।
বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে নদী তীরবর্তী বাড়ি ঘর ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে। অনেকেই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এলাকা ছেড়ে শহরে আবার অনেকেই অন্যত্র বসতবাড়ি গড়ে বসবাস করছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন, নদীভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বরাদ্দ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, নদীভাঙন রোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় জন্য বলব।