Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের সফর ঘিরে বাংলাদেশের প্রত্যাশা

Icon

খালিদ হাসান

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৪:০০

জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের সফর ঘিরে বাংলাদেশের প্রত্যাশা

মিশেল ব্যাচেলেট। ফাইল ছবি

চারদিনের সরকারি সফরে গত ১৪ আগস্ট থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। এবারই প্রথম জাতিসংঘের কোনো মানবাধিকার প্রধানের সরকারি সফরে ঢাকা আগমন।

১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৪ দিনের সফরকালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, কয়েকজন মন্ত্রী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা জনগণ ও সেখানে কর্মরত সংস্থাগুলোর সাথে মতবিনিময় করেছেন।

মানবাধিকার প্রধানের প্রথম সফর হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যাশার পারদ বেশ চড়া। গত বছর ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও এর ৭ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু কারণে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভ্যন্তরীন মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে টানাপোড়েন থাকায় এই সময়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৫ম বর্ষপূর্তির সমসাময়িক হওয়ায় সফরটি আরো বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে।

ব্যাচেলেটের সফর কক্সকাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবেতর জীবনযাপনের প্রত্যক্ষ চিত্র উপস্থাপন করবে। ২০১৭ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হয়। সেই থেকে কক্সবাজার উপকূলের ক্যাম্পগুলোতে তারা বসবাস করছে। দিনদিন তাদের অবস্থা মানবেতর হওয়ার সাথে সাথে সেখানে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যহীনতা, কর্মহীনতা ও বন্দী জীবন তাদেরকে কিশোর গ্যাং, অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিয়কালে তারা ক্যাম্পের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ইস্যুগুলো ব্যাচেলেটকে জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তহবিলের পরিমাণ ২০২১ সাল থেকে প্রয়োজনের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রতিবছর রোহিঙ্গাদের পেছনে অতিরিক্ত খরচের বোঝা বেড়েই চলেছে। কোভিড পরিস্থিতি, চলমান মূল্যস্ফীতির মত সমস্যার মধ্য দিয়েও শরণার্থী ক্যাম্প পরিচালনা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধকালীন নানা বাস্তবতার নিচে চাপা পড়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর ফিরিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বৃহৎ শক্তিগুলোর সক্রিয় ভূমিকা রাখতে ব্যাচেলেটের সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা ও  নিষ্ক্রিয়তা এই সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করেছে। দীর্ঘদিনের নিরবতার ফলে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দাবিতে রোহিঙ্গারা ‘বাড়ি চল’ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবসকে উদ্দেশ্য করে এই ক্যাম্পেইনে রোহিঙ্গারা বলতে চেয়েছে- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর থেকে তারা আস্থা হারাচ্ছে, তারা নিজেরাই তাদের পিতৃপুরুষের মাটিতে ফেরত যেতে চান। ক্যাম্প পরিদর্শনের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রধান বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবেন ও প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সুপারিশ করবেন বলে প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনারের সাথে ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সত্যতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন। রোহিঙ্গা মানবাধিকারের বিষয়টি ছাড়াও ব্যাচেলেটের সফর সরকার ও বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসার পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এটিকে অস্বীকার করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কথার ভিত্তিতে প্রভাবিত না হয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানার সুযোগ হয়েছে ব্যাচেলেটের।

সফরকালে ইতোমধ্যে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গুমসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে বৈঠকে বিচারবহির্ভুত হত্যার বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

মানবাধিকার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সেখানে সবসময়ই উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। গত দুই দশক ধরে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের অবনতি  এবং অন্তঃ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় কোন্দল বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এরই অংশ হিসেবে ইউএনএইচসিআর প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে। ব্যাচেলেট বাংলাদেশকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা প্রোগ্রাম প্রস্তাব করতে পারেন। প্রথমদিন আইনমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে তিনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য এ ধরনের একটি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছেন, যা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাদরে গৃহীত হয়েছে।

অর্থাৎ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক চিত্রটি জানতে পারবে। সফর শেষে আজ বিকেলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে কী বিবৃতি দিবেন, তা থেকেই এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া তার সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্টতা জোরদার হবে বাংলাদেশের প্রত্যাশা।

সর্বশেষ, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে বলেই সবার প্রত্যাশা। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫