Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

তাহিরপুরে খনন চলছে লাউড় রাজ্যের ধ্বংসাবশেষে

Icon

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫৭

তাহিরপুরে খনন চলছে লাউড় রাজ্যের ধ্বংসাবশেষে

ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়ায় আরো দুই মাস খনন কাজ চলবে। এতে আরো অনেক প্রত্নসামগ্রী এখানে পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে এবং সেগুলো এই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা কাজে অনেক সহায়তা করবে। 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে লাউড় রাজ্যের রাজধানীর দুর্গ এলাকায় দ্বিতীয় দফা খননকালে আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ায় এমনি আশা প্রকাশ করছেন খনন কাজে নিয়োজিত প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে দুর্গ খননের প্রাথমিক কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। প্রথম দফা খননে মাটির নিচে চারদিকে দেয়াল বেরিয়েছে। এর একদিকে ৫০ ফুট ও অন্যদিকে ৭৫০ ফুট। দ্বিতীয় দফায় খনন শুরু হয়েছে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি। এরইমধ্যে প্রাচীন রাজধানীর আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এই প্রাচীণ ঐতিহাসিক স্থাপনাকে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত ঘোষণা করে। এর আগে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিদের প্রচেষ্টায় ও স্থানীয় সাংবাদিকদের তৎপরতায় এ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় ও সচেতন মহলের দাবির মুখে ঐতিহাসিক এই স্থানটি সরকার সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে।

স্থানীয় সমাজসেবক মাসুক মিয়া, আশরাফুল ইসলাম আকাশসহ অনেকেই জানান, এই এলাকায় লাউড় রাজ্যের রাজধানীর দুর্গের অবস্থান আছে তা প্রকাশিত হওয়ায় পর সংবাদমাধ্যম ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্যোগে কয়েক দফায় খনন কাজ শুরু হয়েছে। আর এই কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়ায় উৎসুক জনতা ও বিভিন্ন স্থানের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে। তেমনি আমরাও এখন এই এলাকার বাসিন্দা হয়ে নিজেদের গর্ববোধ করি।        

আগামী দুই মাসে গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যাবে। এখানে একটি জাদুঘর স্থাপনসহ অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ হচ্ছে জানিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও হবে।

আগামী ১৩-১৪ মার্চ লাউড়ের দুর্গ পরিদর্শনে আসবেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সংস্কৃতি সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত ছিল। ত্রৈপুর রাজবংশের অধ্যুষিত স্থান ত্রিপুরা রাজ্য বলে সাধারণত কথিত হয়। ওই রাজবংশের অধিকার একসময় বরবক্রের সমস্ত বাম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শ্রীহট্টের তিন ভাগ পৃথক তিনজন নৃপতি শাসন করতেন। গৌড়, লাউড় ও জয়ন্তিয়া। এই তিন খণ্ডের নৃপতির অধীন ছিলেন আরো অনেক ক্ষুদ্র ভূমি মালিক। লাউড় রাজ্য ছিল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার কিয়দংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। লাউড় ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য। তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় লাউড়ের রাজধানী ছিল। এই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হলহলিয়া গ্রামে এখনো বিদ্যমান। এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিশ্র। তারা ছিলেন কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র। তাদের উপাধি ছিল সিংহ। খ্রিষ্টীয় দশম অথবা একাদশ শতকে তিনি কনৌজ থেকে এখানে আসেন। দ্বাদশ শতকে এখানে বিজয় মাণিক্য নামে এক নৃপতি রাজত্ব করতেন। 

এছাড়াও অনেকের মতে, বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতারিত ও পরাজিত সভ্রান্তজন প্রাণ ও মান বাঁচানোর জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তাদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। রাঢ় শব্দ থেকেই লাউড় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপরাজধানী ছিল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫