‘জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলো কাজ করছে না’

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:০৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বে বর্তমানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলবায়ু সংকট। যে আর্কটিক অঞ্চলে আগস্ট মাসে কনকনে শীত থাকতো সেখানে এ বছর দেখা গেছে তীব্র গরম। যে সময়ে যেখানে তুষার বৃষ্টি হতো সেখানে বইছে তীব্র গরম বাতাস। জলবায়ুর পরিবর্তন সত্যিকার অর্থে ভয়াবহভাবে রূপ নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বে বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থাই বিলীন হয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো।
জলবায়ু ইস্যুতে তাই তারাই জোড়ালে ভূমিকা রাখবে এটি সবাই প্রত্যাশা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে সেই প্রত্যাশায় আগেই গুড়েবালি পড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত নাজুক। জাতিসংঘে সেই বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন।
ধনী দেশগুলোর অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলো বিশ্বমঞ্চে জোরালো বক্তব্য রাখলেও পরিস্থিতির গুরুত্বের সাথে তাদের কার্যক্রম সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ফাঁকে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তারা শুধু কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। অথচ তারাই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা ধনী ও উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। তাদেরই এই ইস্যুতে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমরা তাদের দিক থেকে সেই ধরনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এটাই দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, আমি জানি-ধনী দেশগুলো আরো ধনী হতে চায়। তারা অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।
তার বক্তব্যের সঙ্গে সংযোজন করে এএফপি মন্তব্য করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডেলটা ও নিম্নাঞ্চলীয় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ পৃথিবীকে উষ্ণায়নের জন্য দায়ী খুবই সামান্য পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে থাকার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে একশো’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতে, তখন বেসরকারি মাধ্যমসহ ৮৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই, তহবিলটি আরো বৃদ্ধি হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা উন্নত দেশগুলার কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি না।
এএফপি জানিয়েছে, ধনী দেশগুলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ক্ষয়ক্ষতির ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে।
এ বছর ইউএনজিএ জলবায়ু সুবিচারের জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও ছোট্ট দেশ ভানুয়াতুর নেতা জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের ভয়াবহ বন্যায় তার দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্লাবিত হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের ভয়াবহ বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।