Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আট মাসে ৫৭৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:১২

আট মাসে ৫৭৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার

জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৫৭৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮৪ জন ও ৪৩ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার।

আজ শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এসব তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২’ উপস্থাপন করেছে। এ ফোরাম ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে দেশের ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, প্রথম ৮ মাসে ৭৬ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়। এর বেশির ভাগই রাস্তায়, নিজ বাসায় ও স্বজনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার।

এ সময় পর্নোগ্রাফির শিকার ১৫ জন, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ৩ জন, অপহরণ ও পাচারের শিকার ১৩৬ জন, হত্যার শিকার ১৮৬ জন, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার ১৩ জন এবং হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে, আত্মহত্যা করেছে ১৮১ জন ও ৮ কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাওয়া হয়।

জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে ২৮৮ কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এ সময় ৫৮৯টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলেছে, ধর্ষণের ঘটনার পর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। চূড়ান্ত শাস্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

ফোরামটি গৃহশ্রমিক নির্যাতনের তথ্যও তুলে ধরে বলেছে, প্রথম ৮ মাসে ১৫টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে এবং ২ জন হত্যার শিকার ও ১ জন আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের ফোকাসড গ্রুপ আলোচনার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দিনে ৩০ থেকে ৩৫ জন নারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশু নির্যাতন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিরোধ প্রয়োজন। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সুরক্ষা জন্মকাল থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। কন্যাশিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করতে পারলে সবার জন্যই সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।

অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

২. ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন' নামে একটি আইন জরুরিভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।

৩. ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে।

৪. উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

৫. কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৬. শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।

৭. বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার বাজেট বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

৮. সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

৯. নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনসমূহের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০. কন্যাশিশুর প্রতি সমাজের মনোভাব বদলাতে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া এবং পরিবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশন এডুকোর স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইনুদ্দিন মাইনুল, হেলেন মনিষা সরকার প্রমুখ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫