বাংলাদেশের একটি বৃদ্ধাশ্রম থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত
বার্ধক্য মানবজীবনের শেষ অধ্যায়। জীবনের এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। অকাল মৃত্যু না হলে এ অধ্যায়ের সম্মুখীন সবারই হতে হয়। কোনভাবেই বার্ধক্য এড়ানো সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে বাংলাদেশে একসময় প্রবীণরা পরিবারের প্রধান সদস্য হিসাবে মর্যাদা পেয়ে আসতেন। কিন্তু এখন অনেক স্থানে সেই পারিবারিক সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়ছে।
ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষকে বাংলাদেশে প্রবীণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে, বাংলাদেশে বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ছয় মাস। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন। ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৮০ লাখে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ হবে প্রায় সাড়ে চার কোটি।
প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও ভবিষ্যতে এই জনগোষ্ঠীর সেবা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবল এখনো অপ্রতুল।
প্রবীণদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট ৫৭ লাখ প্রবীণ নাগরিক বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন, যদিও সেই টাকার পরিমাণ খুবই কম।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম নুর-উন-নবী বলছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনেও একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে।
অধ্যাপক ড. এএসএম আতিকুর রহমান বলছেন, প্রবীণ হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র বয়স বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত নয়, তার সাথে শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবারের ব্যবস্থাপনা-অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া না থাকলে একটা সময়ে হঠাৎ বড় সমস্যায় পড়ে যেতে হয়।
তিনি বলছেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা একটা খুবই খারাপ অবস্থায় পড়ে যাচ্ছি। যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে আজকে যারা নবীন, তারা অসম্ভব খারাপ একটা অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, গত ৪০ বছর ধরে আমি প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করছি, কিন্তু দুঃখজনক হলো, বার্ধক্য যে আসছে, সেজন্য যে প্রস্তুতির দরকার তা নিয়ে কাউকে সচেতন হতে দেখিনি।’