Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

৭৯ হাজারের জায়গায় এজেন্সি নিচ্ছে ৪ লাখ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৯

৭৯ হাজারের জায়গায় এজেন্সি নিচ্ছে ৪ লাখ

প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত

সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। দেশটিতে যেতে সরকারনির্ধারিত খরচ মাত্র ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক এবং যাওয়ার জন্য তাদের কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এমন কয়েকজন তরুণের সাথে কথা হলে এ বিষয়টি সামেনে এসেছে। 

তবে বিষয়টি একপ্রকার ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো তদারকি নেই।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান এখনো কর্মী পাঠানো শুরু করেনি। তিনি মনে করেন, এখন পর্যন্ত কর্মীরা যে খরচে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন তা অগ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, তারা অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখলেও বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

বনানীতে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির সামনে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অপেক্ষায় ছিলেন পুরান ঢাকা ইমরান আহমেদ। কত টাকায় মালয়েশিয়া যাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালের সাথে তার সাড়ে চার লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছে। 

মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক আরেক যুবক কুমিল্লার আবুল হোসেন মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে। এছাড়া ঢাকায় আসা এবং বিভিন্ন কাজে দালালদের খরচ বাবদ সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকায় তিনি মালয়েশিয়া পৌঁছাতে পারবেন বলেই আশ্বাস পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেশে কিছু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারছি না। এখন মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। টাকা একটু বেশিই দিতে হচ্ছে। ঢাকা এসে জানলাম অনেকে আরও কম খরচে যেতে পারছে। কিন্তু সেটা পৌনে চার লাখের কম নয়।’

দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মীর বিমান ভাড়া নিয়োগকর্তা বহন করবেন এবং চুক্তি শেষে কর্মী ফেরত পাঠানোর খরচও নিয়োগকর্তার।

এরই প্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মী হিসেবে মালয়েশিয়া যেতে সরকারি খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে একজন কর্মীও এই খরচে মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না। বাস্তবতা তুলে ধরে এ বিষয়ে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসা প্রসেসে মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু এবারের বাস্তবতা হলো, এই কাজে সিন্ডিকেটকেই দিতে হচ্ছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এই সিন্ডিকেট ছাড়া ভিসা প্রসেস করা যাচ্ছে না বা তারা করতে দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ভিসা কিনতে মালয়েশিয়ায় দিতে হয় চার হাজার রিঙ্গিত বা এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা আবার হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাঠানো হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রতিটি ভিসা এই টাকায় কিনছে। এর সাথে আছে বিমান ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা, মেডিকেল খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। এর বাইরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অন্যান্য খরচ ১০ হাজার টাকা। মোট খরচ দাঁড়ায় তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তাছাড়া এজেন্ট বা সাব-এজেন্ট বা দালালের হাত বদল হলে মালয়েশিয়া যেতে মোট খরচ দাঁড়ায় চার লাখ টাকার মতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই মাত্র ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া। এই সিন্ডিকেটের ভিসা-বাণিজ্যের কারণেই সুযোগ থাকলেও কম খরচে কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে সম্প্রতি কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আরো ৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে যুক্ত করেছে মালয়েশিয়া। এর ফলে কিছুটা হলেও অভিবাসন খরচ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন যুক্ত হওয়া রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায় রয়েছে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল। তার এজেন্সি কত টাকায় কর্মী পাঠাতে পারবে বা সরকারনির্ধারিত টাকায় পাঠাতে পারবে কি না, জানতে চাইলে শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অভিবাসন ব্যয় যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত আলোচনা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত জানি না কত টাকায় কর্মী পাঠাতে পারব।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমরা অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকেও জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেনি বা করছে না।’

দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফলে এই বাজার উন্মুক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাজারটিতে আমাদের শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ হোক।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫