Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মৌসুমি রোগে ভুগছে মানুষ

অন্যতম চোখ ওঠা ও হ্যান্ড-ফুট-মাউথ

Icon

হামিম উল কবির

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫৮

অন্যতম চোখ ওঠা ও হ্যান্ড-ফুট-মাউথ

প্রতীকী ছবি।

মৌসুমি কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গুর মধ্যেই মানুষ এসব রোগে ভুগছে। একই সঙ্গে আবার করোনাও বাড়ছে। এসব মৌসুমি রোগের অন্যতম হলো চোখ ওঠা ও হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ। আবার বর্ষা চলে গেলেও এর রেশ রয়ে গেছে। বৃষ্টি হচ্ছে, খুব বেশি গরম নেই, রাতে কিছুটা শীত পড়ছে। শহরের চেয়ে গ্রামে ঠান্ডাটা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ফলে এ ধরনের না গরম ও না শীতে অনেকের সর্দি-কাশি শুরু হয়ে গেছে। এই সবগুলো রোগই ভাইরাসজনিত অসুখ। 

মৌসুমি রোগ হ্যান্ড-ফুট-মাউথে কোনো ওষুধ লাগে না, এমনিতেই রোগটি সেরে যায়। এটি মূলত ছোঁয়াচে এবং এই রোগটি শিশুদের বেশি হচ্ছে। চোখ ওঠা রোগ সব বয়সের মানুষেরই হচ্ছে। চোখ ওঠা রোগ ৫-৬ দিনে ভালো না হলে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে সর্দি খুবই সাধারণ আবার খুবই বিরক্তিকর একটি রোগ। এখন অনেকেই সর্দিতে ওষুধ খেতে পছন্দ করেন। কাশি হলে এমনিতেই ভালো না হলে ওষুধ খেতে হচ্ছে।  

চোখ ওঠা রোগ

চোখ ওঠা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যে। এক পরিবারের একজনের হলে পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও হচ্ছে। দেশের সর্বত্রই রোগটি ছড়িয়েছে। চোখ ওঠা রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কনজাঙ্কটিভাইটিজ বা কনজাঙ্কটিভা বলে। ভাইরাসের কারণে রোগটি হয়ে থাকে। সাধারণত বছরের এ সময়টাতেই চোখ ওঠা রোগ বেশি হয়ে থাকে। এই রোগ হলে চোখ  লাল হয়ে যায়। আক্রান্ত হলে এক চোখ অথবা দুই চোখই জ্বলতে পারে, চোখ জ্বালাপোড়ার সঙ্গে চুলকানি হয়। খচখচে ভাব হতে পারে, মনে হতে পারে চোখে কাঁটা ফুটেছে। এছাড়া চোখ থেকে পানি পড়ে, বারবার সাদা ময়লা আসা প্রধান বৈশিষ্ট্য, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা হয়। 

চোখ ওঠা রোগটি এতই ছোঁয়াচে যে, চোখ ওঠা রোগীর সংস্পর্শে না এসে কাছাকাছি থাকলেও রোগটি হয়ে যেতে পারে। কারণ এর ভাইরাস বাতাসে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ, টিস্যু অন্যরা ব্যবহার করলে তারাও আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসের সংক্রমণে প্রদাহ হয়, চোখের মধ্যে থাকা খুবই সূক্ষ্ম রক্তনালি ফুলে যেতে পারে। রক্তনালিগুলো ফুলে যায় বলেই চোখের রং লাল হয়। এমন রোগীর কাছাকাছি থাকলে সাবধান থাকতে হয়। বারবার চোখে বা মুখে হাত না ছোঁয়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। যাদের চোখ ওঠে তাদের চোখ খুব চুলকাতে পারে। চোখে হাত দিলে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আক্রান্তদের চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছে আবদ্ধ জায়গায় বা বাস্কেটে ফেলতে হবে। চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহার্য সামগ্রী না ধুয়ে অন্যদের ব্যবহার করা উচিত নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে অবশ্যই চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভাইরাসে চোখ ওঠা রোগটি হচ্ছে এই ভাইরাসটি চোখের কালো (কনজাঙ্কটিভা) অংশটিকে বেশি আক্রান্ত করে। তবে মাঝেমধ্যে চোখের কর্নিয়াকেও আক্রান্ত করতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে চোখের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। তিনি চোখ পরীক্ষা করে কিছু ওষুধ দেবেন। বরং আমি বলব, মেশিনে পরীক্ষা করে চোখের চিকিৎসা করালেই যথাযথ চিকিৎসা হয়। চোখের ডাক্তার রোগীকে অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে পারেন, দিতে পারেন চোখের অ্যান্টিবায়োটিকও। একই সঙ্গে তিনি লো স্টেরয়েডও দিতে পারেন।

রোগটি কর্নিয়াকে আক্রান্ত করলে যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা করা দরকার। না হলে কর্নিয়াতে দাগ পড়ে যেতে পারে। ফলে রোগী পরে স্থায়ীভাবে ঝাপসা দেখতে পারেন। অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস আরও বলেন, চোখ ওঠা রোগীর চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। চোখের পানিতে  ভাইরাস থাকে। এই পানি খুব সাবধানে মুছে টিস্যুই হোক বা অন্য কিছু হোক যত্রতত্র ফেলা যাবে না। অন্যরা এই পানির সংস্পর্শে এলে তাদেরও চোখ উঠতে পারে। প্রথমে একটি চোখে সমস্যা সৃষ্টি করলেও পরে আরেকটি চোখে সমস্যা হতে পারে। সাবধানে থাকলে, গরম সেঁক দেওয়া হলে চোখে আরাম বোধ করবেন রোগী। এই রোগের সময় বাইরে না যাওয়াই ভালো। বাইরে গেলে চোখে কালো চশমা পরে নিলে রোগী আরাম বোধ করবেন। কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ

হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ মূলত ভাইরাল সংক্রমণ, যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ সময় হাত, পা ও জিহ্বাতেই ফুসকুড়ি দেখা দেয়। তবে উরু অথবা নিতম্বেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। গলা ব্যথা, জ্বর ও খাবারে অরুচি প্রথম দিকের উপসর্গ। এর কয়েক দিন পর মুখ ও জিহ্বায় পুঁজযুক্ত ঘায়ের মতো ফুসকুড়ি হয়।

অনেকের মনে হতে পারে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হয়েছে। এ রোগ মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়াচে। তবে আতংকিত হওয়ার মতো কোনো বিষয় নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের একাধিক শিশু থাকলে আক্রান্ত শিশুকে আলাদা করে রাখা উচিৎ। জ্বর দুই দিনে সেরে গেলেও ফুসকুড়ি কমতে কমপক্ষে ছয় দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন, শুধু হাতে ও পায়ে অথবা মুখে নয়, গলার ভেতরেও এসব গুঁড়ি গুঁড়ি উঠতে পারে। এমন হলে শিশুরা কিছু খেতে চায় না। চিকিৎসকরা এসময় তরল খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন। গলার ভেতরে ফোস্কার মতো হলে ছয়-সাত দিনের মতো লাগে সেরে উঠতে। 

মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়াচে হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ হলে শিশুকে স্কুলে না পাঠানোই উচিত। সাধারণত প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী অথবা এ বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা প্রতিদিন গড়ে হ্যান্ড-ফুট-মাউথে আক্রান্ত ৮ থেকে ১০টি শিশু পাচ্ছেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি বছর তুলনামূলক বেশি শিশু রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত এক বা দেড় বছর বয়স থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের এ রোগ হয়। তবে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের এ রোগ বেশি হয়।

কক্স্যাকিভাইরাস নামে একটি ভাইরাসের প্রভাবে এ অসুখ হয়। প্রাথমিকভাবে জ্বর হয়। আবার অনেকের জ্বর নাও হতে পারে। হাতে, পায়ের পাতায়, কনুই ও হাঁটুতে ফুসকুড়ি হয়। অনেক শিশুর মুখের ভেতরেও ফুসকুড়ি হয়। এগুলো দেখতে চিকেন পক্সের মতো অনেকটা। খ্যাতিমান শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘মুখ গহ্বরে হলেই শিশুদের বেশি কষ্ট হয়। গলার ভেতর হলে খাবার গিলতে ব্যথা লাগে।’

সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমেই এর প্রকোপ বাড়ে। পাঁচ বছর আগে এর বেশি বিস্তার ঘটেছিল। এরপর এ বছর বেশি হার ঘটছে, বিশেষ করে রাজধানীতে। তবে দেশের অন্য স্থানেও কিছু কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এই ছোঁয়াচে রোগটি সাধারণত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া শরীরে হওয়া ফুসকুড়িগুলো ফেটে গেলে সেখানকার রস থেকে ছড়াতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভাইরাসবাহিত এ অসুখের কোনো টিকা নেই। কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধও নেই। হ্যান্ড-ফুট-মাউথে আক্রান্তদের জ্বর হলে সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন দিলে চুলকানি ও অস্বস্তি দূর হবে। 

সর্দি থেকে কাশি

আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। ঠান্ডা না পড়লেও দিবাভাগের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পরিবেশ খুব বেশি উত্তপ্ত হতে পারছে না বলে চরম গরমটা নেই। পরিবেশে ভেজা ভেজা ভাব রয়েছে। ঠিক এই পরিবেশেই সর্দি-কাশি হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার। ভাইরাসজনিত সর্দি অনেক সময় এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। সর্দির অন্যতম ওষুধ অ্যান্টিহিস্টামিন। প্যারাসিটামলের সঙ্গে চিকিৎসকরা এই ওষুধটি দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম রোগীও পাওয়া যাচ্ছে যাদের সর্দি-কাশিটা শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারও কারও বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের তা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন কাশি ভালো না হলে, বুকে যথেষ্ট পরিমাণ কফ জমলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। বুকে কফ জমলে অবশ্যই ওষুধ খেয়ে কফ ঝরিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে তা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে সবাইকে। 

ভাইরাসজনিত এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে গরম পানি, গরম চা, লেবু রসের সঙ্গে শরবত অথবা গরম পানি খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধে মৌসুমি যে কোনো ফল খাওয়ার অভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। এতে আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকা যাবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫