মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের মাত্রা ক্ষতিকর নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:২৪

দেশের মোবাইল টাওয়ার থেকে রেডিয়েশনের মাত্রা জরিপ করে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
হোটেল সোনারগাঁওয়ে আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ শীর্ষক এক আলোচনায় এ দাবি করেছে সংস্থাটি।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মোহাম্মদ আমিনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে টাওয়ার রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও কমিশনের মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে। তাই তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।
তিনি বলেন, টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, এটা ভিত্তিহীন। এটা নিয়ে ভয়েরও কিছু নেই। জরিপে টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশনের ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক। ভবিষ্যতে উন্নত মোবাইল সেবা পেতে হলে আরো বেশি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে হবে।
বিটিআরসির হিসাবে সব অপারেটরদের প্রায় ৩৩ হাজার টাওয়ার রয়েছে। সম্প্রতি দেশের ছয়টি বিভাগে ৭০টি টাওয়ার নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে বিটিআরসি। জরিপ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের উপ-পরিচালক ড. শামসুজ্জোহা।
তিনি বলেন, আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, জামালপুরে জরিপ চালিয়েছি। এ পর্যন্ত কোথাও নির্ধারিত সীমার বেশি রেডিয়েশন পাইনি। জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারের ওপরে পাখির বাসা বাধতে দেখেছি। পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে ও বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে ও তাতে খুব ভালো সবজি ফলন হচ্ছে।
তিনি বলেন, রেডিয়েশন দুই প্রকার- আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্সরে এ পর্যায়ে পড়ে ও এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
মোবাইল রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এর শক্তি খুবই কম, ফলে এর কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। মোবাইল টাওয়ারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে এবং আমরা জরিপে পেয়েছি যে দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে আছে।
টাওয়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ড. শামসুজ্জোহা বলেন, সুপরিকল্পিত যথেষ্ট সংখ্যক টাওয়ার থাকলে তা কম ক্ষমতার রেডিয়েশন ছড়াবে এবং তা তত বেশি নিরাপদ। আমরা আশা করি এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে।
অ্যামটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ছড়ানো হচ্ছে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন মানুষ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা সত্য নয়। সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। প্রযুক্তি বুঝতে হবে। না হলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, দেশে রেডিয়েশনের মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে। এটা খুবই সন্তোষজনক ব্যাপার। টাওয়ার নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হওয়া দরকার।
বিটিআরসির উদ্যোগে ও অ্যামটবের আয়োজনে এই আলোচনায় আরো অংশ নেন স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শহিদুল আলম, হুয়াওয়ে টেকনলজিস (বাংলাদেশ)-এর মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল হাসান।