Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ব্যাংকের যত অর্থ পাচার হয়েছে এতটা লুট করেনি ব্রিটিশরাও

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:২৬

ব্যাংকের যত অর্থ পাচার হয়েছে এতটা লুট করেনি ব্রিটিশরাও

বাংলাদেশি মুদ্রা। ছবি: সংগৃহীত

সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে ব্যাংক সেক্টর ক্রমাগত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত থেকে যেই পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্রিটিশরাও এত টাকা লুট করেনি। একটি গোষ্ঠী ধীরে ধীরে ব্যাংক গিলে খাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এদিকে খেয়াল না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিনারে যুক্ত হচ্ছে। সংকটের এ মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের নাগরিকরা।

গতকাল শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘সংকটে অর্থনীতি : কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন  সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা কোভিড কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে নয়। এই খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতার মুখোমুখি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, মূলত দুর্বল সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাস্তবে যেটা দেখানো হয়, খেলাপি ঋণের পরিমাণ তার চেয়েও বেশি। এটা আইএমএফ বলছে, অর্থনীতিবিদরাও বলছেন। এর ভেতরে যদি আরও কিছু ব্যাপার আনা হয়, ঋণের পরিমাণটা বেশি হবে। স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট, লোন যেগুলো রয়েছে কোর্ট ইনজাকশনের মধ্যে এগুলোর হিসাব দেওয়া হলে সেটি দ্বিগুণের বেশি হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক, আইন ও তথ্যগত দুর্বলতার কারণে ব্যাংক খাতে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের উন্নতি না হলে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি রয়েই যাবে।

রিজার্ভের বিষয়ে সিপিডি বলছে, রিজার্ভের হিসাব নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভের কারণে এলসি খোলা কিংবা আমদানির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। রফতানি বাড়লেও কারেন্ট হিসাব ব্যালেন্স নেতিবাচক। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে এসেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এখানে হুন্ডি মার্কেটের বিরাটভাবে প্রভাবিত করছে, সরকারের আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এটা একটি চিন্তার বিষয়। বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে অপ্রয়োজনীয় এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের ঘাটতি আছে স্বীকার করছি। করোনার মধ্যেও আমাদের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। অনেক জায়গায় আমরা ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করছি। এখন আর ১০ বছরে জনশুমারি হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অর্থনীতি চালাচ্ছি জেনেশুনেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী বিশেষ আলোচক ছিলেন।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির মূল সংকটের একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা। তারা বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে, অথচ ভারতের মতো রাষ্ট্রে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষিত হয়। এটা তো বাজেট না যে, বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাতে মূলত স্বচ্ছতার অভাব। ডাটা পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। কয়েক বছর আগে ব্যাংক খাত সংস্কার করা হলো; কিন্তু দেখা গেল এটা উল্টো রথে গেল। তাদের জিজ্ঞেস করেন কারেন্ট একাউন্ট কীভাবে বাড়ল, তারা কোথায় এ বিনিয়োগ বাড়াল।

তিনি বলেন, রিজার্ভের হিসাবে কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম নাই। রেগুলটরি সংস্থা ‘কিছু করবো’ টাইপের ভাব নিয়ে বসে আছে। সরকারকে ধন্যবাদ আইএমএফের সঙ্গে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।

সংসদ সদস্য শামীম পাটোয়ারি বলেন, দেশের অর্থনীতি নীতিহীন অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। আমরা সংসদে ভুলগুলো উত্থাপন করলে তা উত্থাপন পর্যন্তই থাকে। এটার কোনো অগ্রগতি হয় না। বর্তমানে যত টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে, ব্রিটিশরাও এভাবে এদেশ লুট করেনি। লোভী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে কি করবে, তারা ১০ বছর ব্যবসা করে যতটাকা লাভ করবে, তার চেয়ে একটি ব্যাংক লুট করে বেশি লাভ করবে। সেজন্য তারা ব্যবসা করে না। চাটার দল আস্তে আস্তে ব্যাংক গিলে খাচ্ছে।

রিজার্ভের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এটা অনেক টাকা। তারপরও এত শঙ্কা কেন? কারণ আমদানি করার কারণে এই টাকা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে। আমাদের রেমিট্যান্স কমে আসছে, বৈদেশিক বাণিজ্য কমে আসছে। তাই আমরা এই টাকা সহজেই পূরণ করতে পারব না। এ ছাড়া যে মেগা প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তা থেকে মেগা ইনকাম আসছে না। কিছু প্রকল্প থেকে এক টাকাও আসছে না। তাই এই শঙ্কা। রেমিট্যান্স বাড়ানো ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ানোর উপায় নেই। সেজন্য প্রণোদনা বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত করা যেতে পারে। তা না হলে রেমিট্যান্স বাড়বে না। হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিনার করে, চা খায়। তার তো এই কাজ না। তার কাজ হচ্ছে কীভাবে টাকা পাচার করে বিদেশে বাড়ি বানানো হচ্ছে তা মনিটর করা। আমরা দেশে দক্ষ লোক না বানিয়ে অদক্ষ ভিখারি বানিয়ে ফেলেছি। আর এ অর্থনীতির সংকটেও আমরা অর্থমন্ত্রীকে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি পদ্মফুলের মতো বছরে একবার ফোটেন। অথচ এই সংকটের মূহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫