Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

এ বছর কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৫৩৮ শ্রমিকের মৃত্যু: এসআরএস

Icon

সাইমুন মুবিন পল্লব

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৪০

এ বছর কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৫৩৮ শ্রমিকের মৃত্যু: এসআরএস

জরিপের রিপোর্ট পেশ করছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা

গত ১ বছরে সারাদেশে ৩৯৯টি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে ৫৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে একটি জরিপ প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস)।

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সংস্থাটির নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের মােট ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) পর্যবেক্ষণ করে বছর শেষে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এসআরএস জানায়, ২০২০ সালে অনুরূপ ৩৭৩ টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মােট ৪৩২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। 

উল্লেখ্য, এ বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাধারন ছুটিসহ বিধি-নিষেধে অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারেনি, তার পরও কর্মদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বড় কর্মদুর্ঘটনা ছিল রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা যেখানে ৫২ শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। এছাড়া সােয়ারীঘাটে রােমানা রাবার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫ জন এবং বগুড়ার সান্তাহারে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়।

কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে, যাদের সংখ্যা মােট ১৫০ জন, এর পরেই রয়েছে নির্মাণ খাত এই খাতে নিহত হয়েছে ১৩৮ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ১১২ জন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৮৬ জন, এবং কৃষি খাতে এই সংখ্যা ৫২ জন।

মৃত্যুর কারণ পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮২ জন; আগুনে পুড়ে ৭২ জন; ছাদ, মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে ৫৮ জন; বজ্রপাতে ৪৯ জন; শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩২ জন; রাসায়নিক

দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ২৭ জন; বয়লার বিস্ফোরণে ২৩ জন। এছাড়া পানিতে ডুবে ৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে এসআরএস এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, করােনার দ্বিতীয় বছরটিও শ্রমজীবীদের জন্য সুখের ছিল না। জীবন ও জীবিকা রক্ষায় তারা কাজ করতে বাধ্য। করােনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও তাদের কাজ করতে হয়েছে। যদিও করােনার কারণে দীর্ঘ সময় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বিশেষ করে পরিবহন, নির্মাণ শ্রমিকদের কোন কাজ কর্ম ছিল না। সবকিছুর ক্ষেত্রে একধরনের অচল অবস্থা বিরাজ করেছে, তাই বলে কর্ম-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে মালিকদের অবহেলা এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলাে যথাযথ পরিদর্শনের ঘাটতি কর্মদুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। টেকসই উন্নয়নের জন্য শােভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব এবং এজন্য শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমজীবীর জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাদের সুরক্ষার জন্য শ্রমের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সকলকে আরাে সচেতন হতে হবে এবং এক্ষেত্রে যেকোন ব্যয়কে বিনিয়ােগ মনে করতে হবে।

জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়ােগে বাধা, বেপােরােয়া যান চলাচল ইত্যাদি হলো পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ। কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযােগ দেয়া যেমন- ভেজা হাতে মটর চালু করা, মাথার ওপরে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লােহার রড উঠানােকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিকালে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতের পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছে।

এসআরএস বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ ও আলােচনার মাধ্যমে কর্মদুর্ঘটনা বন্ধে সচেতনতা বাড়ানাের চেষ্টা করে আসছে। কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা প্রতিরােধে এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। একমাত্র সকলের যৌথ প্রচেষ্টাই পারে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা থেকে শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান, সেইফটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মালিকের। মালিক কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব সরকারী প্রতিষ্ঠানের। সরকার ও মালিক উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কমদুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫