Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ প্রস্তুত নয় হাসপাতাল

Icon

সাইমুন মুবিন পল্লব

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৯:২৭

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ প্রস্তুত নয় হাসপাতাল

প্রতীকী ছবি

দেশে হুহু করে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। গত মে মাস মৃত্যুশূন্য গেলেও জুন মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। গেল এক সপ্তাহে প্রতিদিন করোনায় মৃত্যু হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব তীব্র। সেই সঙ্গে একাধিক হাসপাতালে প্রস্তুতিরও ব্যাপক ঘাটতি দেখা গেছে।

সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নামেমাত্র করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে অন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নেই করোনা রোগীদের জন্য আলাদা আইসিইউ বেড। 

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্ধারিত করোনা শয্যা ৫০টির কথা বলা হলেও আছে মাত্র ১৪টি। মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণ বেডে কোনো রোগী ভর্তি নেই। এক হাজার বেডের এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬ জন রোগী। তাদের সবাই আইসিইউতে। টানা চার সপ্তাহ করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এ হাসপাতালে রোগীর চাপ কম।

সংক্রমণের এ সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই বেশি দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো তাগিদ নেই। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন না। মাস্ক পরা থেকে শুরু করে হাত ধোয়া কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন চলছে। মেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনসমাগম হচ্ছে। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। এসব কারণে সংক্রমণের গতি দ্রুত বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে গরুর হাট ও মানুষের স্থান পরিবর্তন বাড়বে। যা সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা জাগাচ্ছে। এজন্য শুধু কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল নয় দেশের সব হাসপাতালেই সকল প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার আগের সংক্রমণের সময় রাজধানীতে পাঁচটি কোভিড  ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ বিভাগ, জেলা, উপজেলা হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিট ছিল। পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসলে সেগুলোতে সাধারণ রোগীর সেবা চালু হয়। ফলে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসিইউ, এইচডিইউ, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলাসহ অনান্য সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এখন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও সরঞ্জামগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত নয়। এ পরিস্থিতি ঠিক না হলে করোনা সংক্রমণ সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। 

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১১০টি দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে এবং প্রতিদিন এসব দেশে করোনায় গুরুতর অসুস্থ প্রত্যেক ছয়জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা করতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে দ্রুত বাড়তে থাকে  রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নিয়মিতভাবে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমেছে। দেশে সংক্রমণ কমে আসায় আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তুলে নেওয়া হয় করোনাকালীন বিধিনিষেধ। গত ২৫ মার্চ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচেই ছিল। এর পর থেকে তা বেড়েছে।

সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ২৯৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৬২ জনের।

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সব জায়গায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। মাস্ক না পরলে শাস্তি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারের করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও জনসমাগম বর্জন করার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানে (যেমন মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫