সিনিয়র রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম
সিনিয়র রিপোর্টার
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, নারী ও পুরুষের সামাজিক সম্পর্কের অসমতা, ক্ষমতা পুরুষের হাতে থাকায় নারী অধস্তন, নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আইনের কাঠামো তৈরি হয়েছে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে বলা হয় কিন্তু কত ধরনের ও কতটা সহিংসতা নারীর উপর হয় তার তথ্য সেভাবে নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে মত বিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
“জেন্ডার বান্ধব আইনাঙ্গন গড়ে তুলি, সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি”- এই প্রতিপাদ্যের আলোকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান মিলনায়তন, জজ কোর্ট-ঢাকায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (পঞ্চম আদালত) মো. ফেরদৌস ওয়াহিদ।
ফওজিয়া মোসলেম আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সহিংসতার ঘটনার বিচার করার সময় নারীকে কেন্দ্রে রেখে সব কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারীর আইন গত সহায়তা প্রদান, আইন সংস্কারে ও জনমত তৈরিতে নারী আন্দোলন এগিয়ে নিতে আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা না গেলে সামাজিকভাবে নারীর অবস্থা শক্তিশালী হবে না।
ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, নারী ও কন্যাকে সমান সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে। সম্পত্তি বন্টনে নারীকে তার প্রাপ্য দিতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ সব প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে পরিচালিত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবীদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে আইনী সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে সহিংসতার শিকার কন্যাদের জন্য কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগ বন্ধে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। গৃহকাজে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস. এম. এ. সবুর বলেন, সমাজের প্রতি অপরাধ সমগ্র মানবতার প্রতি অপরাধ। সারা পৃথিবীতে সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আইন তৈরি হয়েছে নারী পুরুষের শ্রমে, কাজেই সম্পদ সম্পত্তিতে, সমাজ পরিচালনায় নারী-পুরুষের জন্য সুযোগ থাকতে হবে। আজকের সভার গুরুত্ব অনুধাবন করে নারী পুরষের সমতায় সকল আইনজীবীকে আইনের লড়াই জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ বার কাউন্সেলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন বলেন, সামাজিক কাঠামো ভেঙে যাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর সামান্য কলহের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বাড়ছে, পরিবার ভাঙন ও বিবাহ বিচ্ছেদ কমাতে গবেষণা হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম। তিনি বলেন, নারীবান্ধব বিভিন্ন আইনের প্রয়োগে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করে নারী বা কন্যার প্রতি ধর্ষণসহ সকল প্রকার সহিংসতা নিরসন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, সংগঠনের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলেও বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পৃথক ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। নারী নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তারা জেন্ডার সেনসিটিভ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারীকে বিচার নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হয়। নির্যাতনের ব্যাপকতা এমন হচ্ছে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আইনগুলো শুধু একাডেমিক চিন্তা না হয়ে, ব্যবহারিকভাবে কি কি করা যায় এটা সকল আইনজীবীদের ভাবার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি তিনি নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ উত্তরণে করণীয় বিষয়ক সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট রুমানা জামান রিতু এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ারা শাহজাহান। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান মামুন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী শাহানারা ইয়াসমীন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট খন্দকার গোলাম কিবরিয়া (জোবায়ের) ও অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান খান (রচি)।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য সুবিচার পাইয়ে দিতে ৫৩ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নাগরিক সমাজের মধ্যে বিশেষত বিজ্ঞ আইনজীবীদের সহায়তা নিয়ে পারিবারিক পরিমন্ডলে নারীর সমতা, মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইনের খসড়া প্রণয়নেও আইনজীবীরা কেন্দ্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তবে প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমতা প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে নারী আন্দোলনে, এর প্রতিফলন সমগ্র বিচার ব্যবস্থায়ও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তিনি এসময় তরুণ আইনজীবীদের সহিংসতার শিকার নারীদের আইনী সহায়তা দানের ক্ষেত্রে নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আইন সংস্কারের জন্য মানবাধিকার সনদগুলো আত্মস্থ করার জন্য, সনদের আলোকে আইনি সহায়তার রূপরেখা প্রণয়নে সহায়তা করতে নিজেদের হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অন্যান্য আইনজীবী নেতারা বলেন, নারীদের অধস্তন ভাবার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। নিজেদের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। নিজেদের পরিবার থেকে পরিবর্তন করতে হবে কেবল সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ সম্ভব নয়। মামলার পর মামলা করা নারীর জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারে ছেলেমেয়েকে লালন পালনে বৈষম্য পরিহার করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি। কিছু কিছু আইনের সংশোধনও জরুরি। সকল শ্রেণির নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হওয়া জরুরি। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গ্রামাঞ্চলে থাকা নারীদের মধ্যে আইনী সহায়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাড.শরীফুল আলম রাজীব, অ্যাড আওলাদ হোসেন ও অ্যাড. মোর্শেদা খাতুন শিল্পী।
উক্ত মতবিনিময় সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা, শতাধিক আইনজীবী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ সম্পাদক রেখা সাহা ও লিগ্যাল এইড উপপরিষদ সদস্য অ্যাড. হালিমা আক্তার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আইনজীবী মত বিনিময় সভা
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh