ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) পাশ কাটিয়ে শ্রম আইন সংশোধন প্রচেষ্টার প্রতিবাদে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরা এবং দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করতে আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শাহ মো. আবু জাফর, সঞ্চালনা করেন এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অপর যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আমিন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন স্কপ নেতা এবং শ্রম আইন সংশোধন কমিটির শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি রাজেকুজ্জামান রতন ও চৌধুরী আশিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন- স্কপ নেতা আনোয়ার হোসেন, আব্দুল কাদের হাওলাদার, মাহবুবুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা, শামিম আরা, নইমুল আহসান জুয়েল, আমিরুল হক আমিণ, বাদল খান, সাকিল আক্তার চৌধুরী, আহসান হাবিব বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, গার্মেন্টস ওয়র্কার্স এ্যলায়েন্সের আবুল হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ১৯ অক্টোবর শ্রম প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। আমাদের দাবিসমুহ উপেক্ষিত হলে আগামীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্রব্যমূল্য বিশেষ করে শ্রমজীবীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে, এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা, চিকিৎসার খরচ। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারীর মজুরী বাড়ছে না বরং প্রকৃত আয় দিন দিন কমছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিকদের মজুরী মাসের পর মাস বকেয়া রেখে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করা, অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু এবং পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এসবের পাশাপাশি শ্রমিক কর্মচারীদের উপর আরও বড় বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয় শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারা সমূহ। আইনের দোহাই দিয়ে শ্রমিককে বঞ্চিত করা হয় সংগঠিত হওয়ার অধিকার থেকে, তার ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য দরকষাকষি করার অধিকার থেকে। সে কারনেই শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের দাবী ছিলো শ্রম আইনের সংশোধন করা, শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের সম্প্রসারণ করা। কিন্তু আমরা দেখেছি এই শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলাকালেই এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা শ্রমিক কর্মচারীদেরকে সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম আইন সংশোধনী কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন যেমন নেয়া হয়নি, তেমনি টিসিসিতেও আলোচনা চূড়ান্ত না করেই মন্ত্রিসভায় আইন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ মনে করে এর ফলে শ্রম আইনসহ শ্রম সংক্রান্ত নীতিগত বিষয় অনুমোদন করার আইনি প্রক্রিয়াকে লঙ্ঘন করা হলো, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। শ্রম আইন সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যেখানে শ্রমিক সংগঠন সমুহের প্রস্তাব, মালিকপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে যে পর্যালোচনা করা হয়েছিলো এবং তার ভিত্তিতে শ্রম আইনের গণতান্ত্রিক সংশোধনীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো সেই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার সামিল। শ্রম আইন সংশোধনের এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে পুনরায় আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আপনারা জানেন যে শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় সরকার শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার সংকুচিত বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে গত ৬ এপ্রিল ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩’ নামে একটি আলাদা আইন প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছিলো। বিলটি উত্থাপিত হওয়ার পর থেকেই স্কপ, সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনসহ শ্রমিক সংগঠনসমূহ প্রতিবাদ করে আসছে। ধর্মঘট করার অধিকার শ্রমিকদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি অধিকার। এই বিল অনুসারে ১৮টি খাতকে অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি যেকোনো খাতকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোনো খাতকে সরকারিভাবে অত্যাবশ্যক পরিষেবা খাত হিসেবে ঘোষণা করা হলে সেখানে ধর্মঘট করা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। ধর্মঘট আহ্বান করা, সমর্থন করা এবং সহযোগিতা করাকে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে শাস্তির বিধান উল্ল্যেখ করা হয়েছে এই বিলে। যা শ্রমিকদের দরকষাকষি করার অধিকারকে কেড়ে নেয়ার সামিল এবং এই বিল আইনে পরিণত হলে তা দেশী বিদেশী মালিকদের অবাধ লুণ্ঠনকে সহায়তা করবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এই আইন বাংলাদেশের শ্রম আইন, আইএলও কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক বিধি বিধানে ধর্মঘট করার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করবে। অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল সংসদে উত্থাপনের পর স্কপের পক্ষ থেকে সমাবেশ, মিছিল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, শ্রম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। স্কপের সাথে আলোচনার সময় সংসদীয় কমিটিও স্কপের যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছিলেন। কিন্তু এখনও অগণতান্ত্রিক এই বিলটি প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরা কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণের কৌশল এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে অবিলম্বে অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া বন্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাল, গম, আটা, লবন, চিনি, তেল, ওষুধ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ শ্রমিকের ব্যবহার্য সকল পণ্যের দাম বেড়েছে অথচ বাড়েনি মজুরি। তাই শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আইন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, মালিকানা নির্বিশেষে প্রতিটি শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পুণনির্ধারণ, শ্রমজীবী পরিবারের সামাজিক সুরক্ষা, মহার্ঘভাতা, রেশন প্রদানসহ ৯ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। স্কপের ৯ দফা নিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী একবার বৈঠক করলেও দাবি বাস্তবায়নে দৃশমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। আমরা বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে, উৎপাদনে শ্রমিকের অংশগ্রহণ বিবেচনায় জাতীয় ন্যুনতম মজুরী ও সেক্টরভিত্তিক মজুরী নির্ধারণের দাবী জানাই।
এসময় তারা ৯ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে -
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : শ্রম আইন সংশোধন প্রধানমন্ত্রী স্মারকলিপি স্কপ
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh