১১ দফা দাবিতে সোচ্চার পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারী, কর্মবিরতি চলবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবং পরবর্তীতে গত সোমবার (৫ আগস্ট) সরকারের পদত্যাগের পর থেকে দুষ্কৃতকারীরা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যকে টার্গেট করে খুঁজে খুঁজে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করে। একই সাথে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় বিভিন্ন পুলিশ লাইন্সে, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স এবং যানবাহনে। এসময় আহত হয় শত শত পুলিশ সদস্য।

দেশের এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১১ দফা দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এসব দাবি মেনে নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে বলেও জানা তারা। 

বাংলাদেশ পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দেশবাসীকে সম্বোধন করে বলা হয়, ‘আপনাদের একটি নতুন বাংলাদেশে স্বাগতম। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসকল শহীদদের যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি আন্দোলনে আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’

একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে এবং সরকারি আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, পুলিশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুবই ক্ষীণ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী একটি চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে চলে। চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করেই পুলিশ বাহিনীর অধ্বঃস্তনরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। আর সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই পুলিশ বাহিনী আজ ছাত্র-জনতার মুখোমুখি।’

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গত সোমবার (৫ আগস্ট) সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই আমরা (পুলিশ বাহিনীর অধ্বঃস্তনরা) দেখেছি, আমাদের অভিভাবকগণ (পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা) কোনো ধরণের নির্দেশনা ছাড়াই আত্মগোপনে চলে যান যা আমাদেরকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেয়। যথাযথ নির্দেশনার অভাবে আমরা অনেক পুলিশ সদস্যদের হারিয়েছি। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি কর্তৃক পুলিশ সদস্যদের বাসাবাড়িতেও হামলা চালানো হচ্ছে। জীবন রক্ষার্থে অনেকে আত্মগোপনে আছে।’

‘এমতাবস্থায়, পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের নিরাপত্তা এবং নিম্নোক্ত দাবী নিশ্চিত না হওয়া অবধি আমরা পুলিশ বাহিনীর অধঃস্তনরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি।’

পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তা- কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য ১১ দফা দাবিসমূহ-

১. চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সকল পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, আজীবন পেনশন-রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

৩. পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ পিএসসির অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

৪. সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। সেক্ষেত্রে পুলিশ পরিদর্শক পদ থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ এবং সেটি যথাসময়ে নিশ্চিত করা। সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর পদে পিএল হবার ১ বছরের মধ্যে পদোন্নতি দিতে হবে। এছাড়া কনস্টেবল/নায়েক/এটিএসআই/এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাশকৃতদের পরবর্তী বছর পুনঃপরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা বাতিল এবং পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে পাশকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ করা।

৫. আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, পুলিশের কর্মঘন্টা কমিয়ে ০৮ ঘন্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘন্টার জন্য ওভারটাইম প্রদানের ব্যবস্থা করা অথবা বছরে ২টি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা।

৬. পুলিশের ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধিকরণ, টিএ/ডিএ বিল প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান এবং প্রযোজ্য সকল সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে ৬০ দিন করতে হবে। দেশ এবং জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়া সম্ভব না হলে অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হবে।

৮. পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করতে হবে যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা এবং অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়।

৯. পুলিশ বাহিনীকে যেনো কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে।

১০. পুলিশের সকল থানা, ফাঁড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করতে হবে এবং অধঃস্তন কর্মকর্তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //