মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৩ পিএম
বলা হয় নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। সেটাই দেখা গেল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ দেখা গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা, সাবেক সংসদ সদস্যদের বাড়ি, প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন কার্যালয় ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে।
হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ভাঙচুরের তথ্যও পাওয়া গেছে। যদিও প্রায় প্রতিটি পরিবর্তনের পর এ ধরনের নৈরাজ্যের খবর পাওয়া যায়। কারও ঘর পোড়ে, আর কেউ তাতে আগুন পোহায়, কেউ বা সেই আগুনে আলু পুড়ে খেতে চায়।
তবে এবার দেখা গেছে ইতিবাচক বেশ কিছু দৃশ্য। শহরে শহরে ছাত্ররা দলবেঁধে পাহারা বসিয়েছে মন্দির রক্ষা করতে। প্রায় সব মসজিদ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মন্দির রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সচেতন তৎপরতা দেখা গেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও।
তারপরও সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সংক্রান্ত কিছু তথ্যও তুলে ধরা হয়।
তবে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবসানে এবার মানুষের মধ্যে বিশেষ সতর্কতা লক্ষণীয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ছাত্রজনতাকে আমরা অনুরোধ করছি যেন তারা ছোট ছোট দল গঠন করে নিজ নিজ এলাকার ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো রক্ষা ও পাহারার ব্যবস্থা করেন। আরেক সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, বিভিন্ন জেলায় আমাদের হিন্দু এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় ভাইবোনদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। কেননা আমাদের আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা ও পরিকল্পনা চলছে।
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল প্রবর্তক এলাকার ইসকন মন্দির ও প্রবর্তক মন্দিরে যান। তারা মন্দিরে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও ধর্মগুরুদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীদের একটি দল সেখানে পাহারার ব্যবস্থা করেন। এলাকার বিভিন্ন মন্দিরে দলবেঁধে পাহারা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জনতা। একইভাবে হাটহাজারী কালী মন্দির পাহারা দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল নন্দীরহাট ও ফতেয়াবাদ এলাকার মন্দির পাহারা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় রক্ষায় অনেকেই এগিয়ে আসেন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে সোচ্চার দেখা গেছে সবাইকে।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয় নিরাপদ রাখতে রাতভর পাহারা দিতে দেখা গেছে মাদ্রাসার ছাত্র ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের। কুমিল্লা ও হবিগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় রাতভর পাহারা দিয়েছে মাদ্রাসার ছাত্র, জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
মন্দির পাহারা দেওয়া ছাত্র-জনতারা বলেন, হিন্দুরাও আমাদের ভাই-বোন। তাই তাদের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষা করতে মন্দিরের সামনে আমরা অবস্থান নিয়েছি। এভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় স্রোতের বিপরীতে এবার হেঁটেছে মানুষ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh