যেভাবে চলবে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতা বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে। থানা ও ফাঁড়িতে হামলার পর অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে লুটপাট করা অস্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈধ অস্ত্রও। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়, কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে মঙ্গলবারের (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। মঙ্গলবারের মধ্যে গোলাবারুদসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হামলা করে লুটপাট করা হয়। লুণ্ঠিত ওই সমস্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেয়ার শেষ সময়ও মঙ্গলবার। রবিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের ঘোষণা দেন।

তবে থানাগুলো থেকে কি পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছে সে বিষয়ে পরিসংখ্যান মঙ্গলবারের পর জানানো হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যেভাবে পরিচালনা করা হবে অভিযান

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, স্থগিত করা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দিলে উদ্ধার অভিযানে সেগুলো জব্দ করা হবে। একই সাথে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেহাত হওয়া ও হারানো অস্ত্রসহ যেকোনো অবৈধ অস্ত্র এ অভিযানে উদ্ধার করা হবে।

সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের যৌথ সমন্বয়ে অপারেশন টিম গঠন করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবেন পুলিশ কমিশনার। সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় কমিশনার এ অভিযান পরিচালনা করবেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কোর কমিটির মাধ্যমে স্থগিত করা লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনার ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হবে। এই কমিটিতে পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

এছাড়া অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণ বা হেফাজতকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়টি জেলা তথ্য অফিস প্রচার করবে।

যে কারণে এই অভিযান

আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন সময়েই বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার দেখা গেছে। বিরোধীপক্ষকে দমন করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের প্রদর্শন করতেও দেখা গেছে। এসব ক্ষেত্রে অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে সময় ছড়িয়ে পড়ে।

এসব ভিডিওতে তাদেরকে কখনো পুলিশের সামনে আবার কখনো নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকারীদের দমাতে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছে। এ আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে তিন দিন রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রায় ৫০০ থানায় হামলা হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

পুড়িয়ে দেয়া হয় থানা ও পুলিশের যানবাহন। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সব থানার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পুলিশ এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে। এদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের সময়ে এদের অনেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট গত সরকারের শাসনামলে দেয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। পরে গত ২৭ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেয়ার সময়ও বেধে দেয় পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ সদর দপ্তর কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে মঙ্গলবারের মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময়ের মধ্যে কেউ এসব লুণ্ঠিত অস্ত্র জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।


সূত্র : বিবিসি বাংলা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh