২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্যমতে, তখন শাহরিয়ার আলমের স্থাবর কোনও সম্পদ ছিল না। তার বাবা মো. শামসুদ্দিন ছিলেন রেলের কর্মচারী। কিন্তু মাত্র ১৬ বছরে সম্পদহীন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজ্যত্ব গড়ে তুলেছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর এসব জমি ও অর্থসম্পদ গড়ে তোলার নেশায় শাহরিয়ার আলম তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছেন। তিনি তার এপিএস সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন টিআর-কাবিখাসহ সরকারি সব অনুদান ও প্রকল্প। এমনকি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগেও করেন বাণিজ্য। চাকরি, বদলিসহ বিভিন্ন কাজেও এপিএসের মাধ্যমে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতিমন্ত্রীর তহবিলে টাকা না দিলে কারও টিআর-কাবিখা বা সরকারি অনুদান পাওয়ার সুযোগ ছিল না। আবার টাকা দিলে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেও মিলেছে সরকারি বরাদ্দ।
সম্প্রতি আওয়ামী শাসনামলে এই নেতার সম্পদের পাহাড় গড়ার একটি চিত্র উঠে এসেছে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের ‘সম্পদে টইটম্বুর শাহরিয়ার, সঙ্গে দারাপুত্রপরিবার’ নামক একটি প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে রাজশাহীতে নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্মস লিমিটেড নামে একটি কৃষি খামারের মালিক শাহরিয়ার আলম। এ ছাড়া ২০২০ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বসন্তপুর মোড়ের পাশে একই প্লটে ৪০ বিঘা জমি কিনেছেন। জমির মালিক ছিলেন বাঘা উপজেলার বাঘা পেট্রোল পাম্পের মালিক গোলাম মোস্তফা। তাঁর অভিযোগ, জমির মূল্য পরিশোধ না করে শাহরিয়ার আলম প্রতারণার মাধ্যমে দখল নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শুধু এটিই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হয়েই সম্পদে টইটম্বুর হয়ে ওঠেন শাহরিয়ার আলম। নিজের জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, তিনি ছিলেন ‘ভূমিহীন’। অর্থাৎ তার কোনও স্থাবর সম্পদ ছিল না। কিন্তু ১৫ বছরেই তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাশিয়া, ব্রাজিল ও চীনে খুলেছেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গড়েছেন আটটি পোশাক কারখানা। নিয়েছেন নিজের রেনেসাঁ গ্রুপের নামে ‘দুরন্ত’ টেলিভিশন। রাজশাহীতে করেছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। পাশাপাশি ঢাকার গুলশানে নিজের নামে দুটি, পুত্রের নামে একটি এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে নিয়েছেন ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের রাজকীয় ফ্ল্যাট। নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি দেখিয়েছেন ৫১ বিঘা। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্যমতে, তখন শাহরিয়ার আলমের স্থাবর কোনও সম্পদ ছিল না। তার বাবা মো. শামসুদ্দিন ছিলেন রেলের কর্মচারী।
নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্মস লিমিটেড ছাড়াও শাহরিয়ার আলম খামারবাড়ি করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকায়। এমপি হওয়ার পর ২০১০ সালে ২৫ বিঘা জমি কেনেন সেখানে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২৫ বিঘা জমি কিনলেও প্রভাব খাটিয়ে আরও ১০ বিঘা জমি দখল করেছেন তিনি। সেখানে গড়ে তুলেছেন বাংলো বাড়ি, গরুর খামার, টিস্যু কালচার ল্যাব, বনসাই গবেষণাগার। চৌধুরীহাট এলাকার এই জমি দেখিয়ে ২০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণও তুলেছেন।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়ও ২০১৭ সালে ১৩ বিঘা জমি কেনেন শাহরিয়ার আলম। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে খামারবাড়ি। বিভিন্ন দামি সবজি, মাছসহ নানা ধরনের চাষাবাদ করা হচ্ছে।
শাহরিয়ার আলম নির্বাচনী আসন রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) এলাকায়ও পোশাক কারখানা স্থাপনসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে কিনেছেন কোটি কোটি টাকার জমি।
লালপুরে শাহরিয়ার আলমের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি। সেখানকার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কন্যা সিলভিয়া পারভীন লেনিকে দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথম স্ত্রী আয়েশা আক্তার ডালিয়াকে তালাক দেন তিনি। এর পর দ্বিতীয় স্ত্রী লেনির মা রোকসানা মর্ত্তুজা লিলিকে ২০২১ সালে শাহরিয়ার আলম প্রভাব খাটিয়ে মেয়র বানান। স্ত্রীকে সেখানে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি করে দিয়েছেন। ঢাকার গুলশানে শেখ রেহানার বাড়ির সামনে ৩ হাজার ৬০০ স্কয়ার ফুটের রাজকীয় ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালে রাজশাহী-৬ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন তিনি। পরে ২০১৮ সালেও একই পোর্টফোলিও ধরে রাখতে সক্ষম হন। তবে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্ব পাননি তিনি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : আওয়ামী লীগ দুর্নীতি সংসদ সদস্য এমপি শাহরিয়ার আলম
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh