মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির অর্থ বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান।
আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ও সরকারের কাছে পাওনা অর্থের বিষয়টিও বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।
মার্কিন জ্বালানি খাতের কোম্পানি শেভরন, বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট, কোমল পানীয় কোম্পানি কোকাকোলা, বহুজাতিক আর্থিক কোম্পানি সিটি ব্যাংক এনএ, মাস্টারকার্ড, জেনারেল ইলেকট্রনিকস বা জিইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রধানেরা বৈঠকে অংশ নেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভসহ সফররত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের (অ্যামচেম) সভাপতি ও এক্সপেডিটরস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এরশাদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল মূলত বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল। এ দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো কী এবং সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা জানতে চেয়েছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। ব্যবসায় যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে কি না, তা–ও তারা জানতে চেয়েছেন।
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হয়রানির কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি ঘটেছে। ব্যবসায়ীদের অনেকে বলেছেন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে শিল্প পুলিশকে সক্রিয় করা দরকার। এছাড়া বন্দরে পণ্য ওঠানামায় যে জট রয়েছে, সে ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। ডলার–সংকটের কারণে যে সমস্যা হচ্ছে, সেই বিষয়ও আলোচনায় আসে।
বৈঠকে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশ প্রধানেরা ব্যাংক খাতের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য এবং ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতিকে ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। পাশাপাশি করব্যবস্থার বৈষম্য ও হয়রানি বিনিয়োগ ও ব্যবসা–বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানান এসব ব্যবসায়ী।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধিদলকে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের করব্যবস্থা এমন যে যারা সব আইনকানুন মেনে কর প্রদান করে থাকে, তাদের ওপর করের চাপ বেশি পড়ে। যেহেতু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আইন মেনে ব্যবসা–বাণিজ্য করে, তাই তাদের ওপর করের বোঝা প্রতিবছর বাড়তেই থাকে। এ কারণে করব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বৈঠক শেষে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, জ্বালানি–নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার ও পরিবহন খাতের মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh