নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) হাসিনার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগের বিচারকাজ শুরু হয়। এর প্রথমদিনেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স তার শিরোনামে লিখেছে, ‘নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি’। বার্তা সংস্থাটি বলেছে, এ বছরের শুরুতে শুরু হওয়া সহিংস আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শিরোনাম করেছে, ‘শেখ হাসিনা: সাবেক নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি।’
প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।'
বিবিসি আরও লিখেছে, ‘২০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা হাসিনাকে স্বৈরাচার হিসেবে দেখা হয়। তার সরকার নির্মমভাবে ভিন্নমত দমন করেছিল।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, ভারতে তার উপস্থিতি ঢাকার নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে দিল্লির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারত তাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের অনেকেই ক্ষুব্ধ
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেছে। দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে যা তাকে (হাসিনাকে) ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হতে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেবে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, হাসিনা সরকার ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার করতে এই আদালত প্রতিষ্ঠা করে। যদিও এটির বিচারকার্য নিয়ে জাতিসংঘসহ অন্যান্যরা প্রশ্ন তুলেছিল। অভিযোগ ছিল, বিরোধী দলীয় সদস্যদের হত্যায় এই আদালত ব্যবহার করা হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারত। যা দিয়ে তিনি চাইলে অন্য দেশে যেতে পারবেন। কিন্তু তিনি যদি ভারতে থেকে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দিতে হবে।
এছাড়া পাকিস্তানের দ্য ডন, মধ্যপ্রাচ্যের গালফ নিউজ, খালিজ টাইমসেও হাসিনার বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। সেই ট্রাইব্যুনালে জামায়াত-বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করা হয় এবং তা কার্যকরও হয়। সেই ট্রাইব্যুনালেই এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন এই আদালতে তারও বিচার হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে গঠিত এ ট্রাইব্যুনালে পরিবর্তন আনা হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে প্রধান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল পুনর্গঠনের অনুমোদন দেয় আইন মন্ত্রণালয়। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা ১৫ অক্টোবর বিচারিক কাজে যোগ দেন।
ছাত্র আন্দোলনের সময় কয়েকশ মৃত্যুর ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কয়েক ডজন নেতা ও সহযোগীর বিরুদ্ধে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh