ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের চেয়ে গড়ে বেশি আয় করেন বাংলাদেশের মানুষেরা। আয়ের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অথচ দুই দশক আগেও ভারত ও পাকিস্তান বেশ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়ে।
গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারী ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে অনেক স্বল্প আয়ের দেশ ঋণ সংকটে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এবং এই ধারা এখনও অব্যাহত।
তবে এর প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একেবারে নেতিবাচক ধারায় যায়নি, যদিও তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে সাড়ে ৪ শতাংশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। পরবর্তী দুই বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি অর্জন করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছায়।
তবে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আবার ধীর হয়ে আসে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিশ্বব্যাংক ৬৩টি দেশকে নিম্ন আয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এর পর থেকে ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশসহ ৩৯টি দেশ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এর অর্থ, ২০২৩ সাল নাগাদ এই দেশগুলোর বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৪৫ ডলারের উপরে ছিল।
তবে বাকি দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ৬টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের সম্ভাবনা রাখে, যা তাদের প্রবৃদ্ধির হারে টেকসই হওয়াকে নির্দেশ করে। গত ২৫ বছরে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
এসব বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আসন্ন গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, যা আগামী ১৪ জানুয়ারি প্রকাশিত হবে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশর মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০০ সালে ছিল ৪৩০ ডলার। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৬০ ডলারে। ওই সময়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫৬৫ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে ভারতের মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪৪০ ডলার থেকে হয়েছে ২ হাজার ৫৪০ ডলার। ওই সময়ে দেশটির মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৪৭৭ শতাংশ। ওই সময়ে ভারতের চেয়ে মাথা পিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হয়েছে।
ভুটানের মাথাপিছু জাতীয় আয় ৭২০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ ডলার। ওই সময়ে দেশটির মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৪১৯ শতাংশ। মায়ানমারের মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০০ সালে ছিল ১৯০ ডলার। গত বছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ২১০ ডলারে। ওই সময়ে দেশটির মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়েছে ৫৩৭ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে নেপালের মাথাপিছু জাতীয় আয় ২২০ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩৭০ ডলার হয়েছে। ওই সময়ে দেশটির আয় বেড়েছে ৫২৩ শতাংশ। পাকিস্তানের মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪৭০ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০০ ডলার হয়েছে। দেশটির আয় বেড়েছে ২১৯ শতাংশ। আফগানিস্তানের মাথাপিছু জাতীয় আয় গত বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০ ডলার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh