সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠনের প্রতিবাদ

‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক গতকাল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) উপসচিব পদে পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫% এর বদলে ৫০% কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন-এই ঘোষণার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) এবং সারা দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসক। 

এ বিষয়ে আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিএএসএ। এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ির সচিব বরাবর কার্যবিবরণী প্রেরণে মাধ্যমে প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএএসএ জানায় যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রতিবেদন সরকারের নিকট জমা দেওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে এই ধরণের ঘোষণা অনভিপ্রেত, আপত্তিকর ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। 

‘উপমহাদেশে সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসে সকল সময়েই প্রশাসন ক্যাডার/সার্ভিসের লোকেরাই উপসচিব/যুগ্মসচিব/অতিরিক্ত সচিব/সচিব পদে কাজ করে আসছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস বলে পৃথিবীর সকল সময়ে, সকল স্থানে রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বর্তমান প্রশাসন ক্যাডারের অনুরূপ একদল মানুষ নিয়োজিত ছিল। রাষ্ট্র যাতে জনতার স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেই উদ্দেশ্য ম্যাক্স ওয়েবার ও উড্রো উইলসন মেধাভিত্তিক, রাজনীতিবিদ থেকে আলাদা, আইন-কানুনকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা একদল মানুষের সমন্বয়ে আমলাতন্ত্রের ধারণার প্রচলন করেন।’ 

‘উপমহাদেশে আইসিএস, পাকিস্তান আমলে সিএসপি ও বাংলাদেশের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার মেধাভিত্তিক সেই আমলাতন্ত্রের মূলধারা। রাষ্ট্রে প্রশাসন ক্যাডারের কার্যপরিধির সাথে পলিসিমেকিং এর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্য ক্যাডারের একটা বড় পার্থক্য হলো প্রশাসন ক্যাডারের কাজের ধরণ হোলিস্টিক, যেখানে অন্যান্য ক্যাডারের কাজের ধরণ স্পেসিফিক ও বিশেষ প্রকৃতির। সরকারের নির্বাহী বিভাগের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে সহকারী কমিশনার/সহকারী কমিশনার (ভূমি)/উপজেলা নির্বাহী অফিসার/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পলিসি নয় বরং সকল পলিসি বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের মূল কাজটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই করে থাকেন।’

‘এসব কাজ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য যে পলিসি এক্সপার্টাইজ ও সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্ন্তদৃষ্টি নিয়ে আসে তা সচিবালয়ের পলিসি তৈরীতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। পলিসি তৈরীর ক্ষেত্রে সচিবালয়ে উপসচিব ও তদুর্ধ্ব কর্মকর্তারা পলিসি সম্মন্ধে মাঠের বাস্তবতা, অর্জিত জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টি দেশের জনগণের প্রতিনিধি রাজনীতিবিদদের কাছে তুলে ধরেন যারা দেশের নেতৃত্ব দেন। সচিবালয়ে আমলাতন্ত্র রাজনীতিবিদ ও মাঠপ্রশাসনের মধ্যে একটি যোগসূত্রের মত কাজ করে। একারণেই মাঠ প্রশাসনে কর্মরতরাই এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।’

এছাড়া মাননীয় আপীল বিভাগের রায়ে কেন ৭৫% কোটা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষণের দরকার সেই যুক্তিগুলোও তারা তুলে ধরেন। মহামান্য আপীল বিভাগের রায়ে উল্লেখ করা হয়, সুযোগের সাম্য হবে একই শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার শুরুতেই এই সাম্য ছিলো। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর মেধার ভিত্তিতে বেশি নাম্বার পাওয়ারাই বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে এসেছে। যেহেতু পিএসসি সুপারিশ পর্যায় থেকেই কর্মকর্তাগণ চয়েস ও নাম্বারের ভিত্তিতেই বিভিন্ন ক্যাডারে শ্রেণিভুক্ত হয়ে যান, সেহেতু প্রশাসনিক উপসচিব পদে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ব্যতিরেকে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের পুনরায় নিয়োগ বা পদোন্নতি বা গ্রেড উন্নয়ন পাওয়ার সহজাত কোন অধিকার নেই।

উল্লেখ্য, সারাদেশের সকল জেলা প্রশাসকও একই বিষয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং এই প্রস্তাব গৃহীত হলে এটি প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যমূলক হবে তারা জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh