হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় এক বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত জহুর আলী (৫৫) চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের বাসিন্দা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও সীমান্তের ওপারের ভারতীয় লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। জহুর আলীর মরদেহ ভারতীয় পুলিশ ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত জহুর আলী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে ৫ জানুয়ারি বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে জহুর আলী অল্প মূল্যে কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো নিয়ে তিনি গতকাল সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। আজ মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় সীমান্ত এলাকায় প্রচারিত হয় যে নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশের। তখন স্থানীয় বাংলাদেশিরা ওই লাশ শনাক্তের চেষ্টা করেন। এদিকে ভারতীয় লোকজন লাশটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাংলাদেশের অনেকেই ছবি দেখে চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের জহুর আলীর বলে শনাক্ত করেন। তবে তিনি ভারতে গেলেন কী করে, এ নিয়ে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং স্থানীয় গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মালেক বলেন, তারা সীমান্ত থেকে খবর পেয়েছেন, বিএসএফ ও ওই এলাকার কিছু মানুষ জহুর আলীকে সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। পরে তারা লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। ভারতীয় লোকজন তাদের এ ঘটনা জানান।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আলম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখতে পাই, ভারতের খোয়াই পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করতে সীমান্ত এলাকায় গৌরপুরে আসে। পরে তারা এ লাশ উদ্ধার করে ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জহুর আলীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
এদিকে বিজিবি হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়ন আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে জানায়, ভারত সীমান্তে নিহত জহুর আলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত। তিনি গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। ৬ জানুয়ারি কোনো এক সময়ে হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন গুইবিল বিওপির মানিকভান্ডার এলাকার মেইন পিলার ১৯৬৮/এম-এর কাছ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
আজ সকাল ১০টার দিকে ভারতের প্রায় ৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরে স্থানীয় জনগোষ্ঠী খোয়াই থানার অন্তর্গত গৌড়নগর এলাকায় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তিকে নিথর পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় খোয়াই থানায় খবর দেন। ভারতের খোয়াই থানা থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে নিশ্চিত করেন। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে লাশ বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।
হবিগঞ্জ বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান বলেন, বিএসএফ তাদের জানিয়েছে, এ মৃত্যুর বিষয়ে তারা সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে জেনেছে। এর আগে তারা কিছুই জানতেন না। কীভাবে জহুর আলীর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়টি তারাও তদন্ত করছেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : সীমান্তে হত্যা বিএসএফ
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh