ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায় দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা কার্যালযের এক বিবৃতিতে ৩২ নম্বরের ভাঙচুরের ঘটনা ‘অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে বলা হয়, “পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”
বুধবার শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ছাত্র জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙার পাল্টা ঘোষণা আসে।
জানানো হয়, রাত ৯ টায় বুলডোজার নিয়ে গিয়ে বাড়ি ভেঙে দেয়া হবে।
এ দিন বিকেলে ইউটিউবার ইলিয়াস ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
এ কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি।
তবে ভাঙচুর শুরু হয় রাত আটটায়। কয়েক হাজার মানুষ শুরুতে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে এসে বাড়িটির বিভিন্ন অংশ খুলে আগুনে ধরিয়ে দেয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। লুট করা হয় মূল্যবান ও ঐতিহাসিক নানা স্মারক। হামলাকারীরা বাড়ির দরজা, জানলার ফ্রেম থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট বেঁচে যাওয়া জিনিসপত্র খুলে নিতে শুরু করে। পরে গভীর রাতে আসে ক্রেন, এক্সকেভেটর।
রাতে একদল সেনা সদস্য বাড়িটিতে এলেও কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে যায়। ফলে ভাঙচুরকারীরা বলতে গেলে বিনা বাধায় তাদের কাজ করতে থাকে। সকাল থেকে আবার শুরু হয় ভাঙচুর। সারাদিনে বাড়িটির প্রায় পুরোটিই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে যার দুটো অংশ আছে।
বিবৃতি বলা হয়, “একটা অংশ হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হুমকি-ধামকির সুরে কথা বলেছেন অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, “দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।”
শেখ হাসিনা সহিংস আচরণ করছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে উল্লেক করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে।
শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ভারতকে উদ্দেশ করে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না দেয়।