সংস্কারে বাংলাদেশে ‘প্রকৃত রূপান্তর ঘটবে’, আশা গুতেরেসের

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জন্য বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকৃত রূপান্তর ঘটবে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থনও’ জানিয়েছেন।

শনিবার বিকালে ঢাকার একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আন্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থনের জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন তা তিনি করবেন এবং বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশে থাকবেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আশা করেন, বাংলাদেশের জনগণের সাধারণ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সফল সংস্কার প্রক্রিয়া গণতন্ত্রে উত্তরণে সহায়তা করবে।

মহাসচিব গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশ যখন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা এবং নিরাময় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। আপনারা জাতিসংঘকে আপনার অবিচল অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করতে পারেন। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করে সবার জন্য একটি টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।”

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন গেল ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ করা হয়েছে।

সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশন কাজ শুরু করে।

সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। প্রধান উপদেষ্টা আন্তোনিও গুতেরেসেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতিগুলো তুলে ধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হতে পারে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ছোট সংস্কারের প্যাকেজে সম্মত হয়। তবে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হবে যদি দলগুলো বৃহত্তর সংস্কারের প্যাকেজে সম্মত হয়।”

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য এখনও যা করেছে তা প্রশংসনীয়। তাদের দেশে ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে জাতিসংঘ।”

আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়তা দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমি আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে আমরা এই মানবিক বিপর্যয় এড়াতে পারি।”

এদিন বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে বৈঠক শেষে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এর আগে তিনি শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ এর উদ্বোধন করেন।

জাতিসংঘের নতুন ভবনের উদ্বোধনকালে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস উপস্থিত ছিলেন।