প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে ঢাকার দেওয়া প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর সফরসূচি নিয়ে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তাতে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের কোনো কথা রাখা হয়নি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বৈঠকে বিমসটেকের বর্তমান সভাপতি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষাৎ হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রদান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন। চীনের আগে তিনি দিল্লি যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বলে মঙ্গলবার সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’কে জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যমটিকে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা সবার আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য গত ডিসেম্বরে ভারতকে বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারত থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।”
চীন থেকে ফেরার পর মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্যাংকক যাবেন। ৩ ও ৪ এপ্রিল সেই সম্মেলনে ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে চান জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, অনেক দিন আগে এই ইচ্ছা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে বার্তা দিয়েছে।
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘গুম-খুন’ এবং শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ এনে সেগুলোর বিচারের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেশে ফেরত পাঠাতে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।
ইউনূস সরকারের অভিযোগ, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।
বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক জোট বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেললের ফাঁকে ইউনূস-মোদী বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন মঙ্গলবার এক সম্মেলনে বলেন, “আমরা যে কোনো দেশের সাথে শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক, সেই বৈঠককে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”
“আমরা আশা করি যে, যদি এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে স্থবিরতা, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দুই দফায় দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও তা হয়নি। বিমসটেকের সম্মেলনে তাদের বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল।
এ জোটের ষষ্ঠ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা পিছিয়ে নভেম্বরে করার চিন্তাভাবনা করা হয়। ওই সময়ও ইউনূস ও মোদীর বৈঠকের কথা উঠেছিল।
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের কথা উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
এর কারণ হিসেবে গত ২১ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।”
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, “ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূসের বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, বৈঠকটি হবে না। ইউনূসের বক্তব্য নয়াদিল্লি ভালোভাবে নেয়নি।”
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh