ইউনূসের চীন সফর বাণিজ্যের চাবি ‘খুলে দিয়েছে’, দাবি সরকারের

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ‘বাণিজ্যের চাবি খুলে দিয়েছে’ বলে এই সফরের বিষয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে।

সরকার প্রধান সফর থেকে ফেরার পরদিন রবিবার রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন তার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান।

এই সফরের বিষয়ে জানাতেই সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, যে সফরটিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক দাবি করা হয়েছে।

চীন সফর ‘বাণিজ্যের চাবি খুলে দিয়েছে’ মন্তব্য করে খলিলুর বলেন, “আমাদের যেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা এই সফরের মধ‍্য দিয়ে অনেকটাই দূর হয়েছে।”

এই সফরে বাংলাদেশের পণ্যকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা এসেছে, এতদিন ৯৮ শতাংশ পণ্য এই সুবিধা পেত; অবশ্য শুল্ক সুবিধা পাওয়ার পরেও গত ছয় বছরেও চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়েনি বলেই সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার বিষয়ে অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি চীনের। দেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতির চেয়ে একটি দেশের সঙ্গে ঘাটতিই বেশি।

২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেওয়া এক তথ্যে জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫২৩ কোটি ৯৫ লাখ বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। একক দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গেই ঘাটতি ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৯২ লাখ বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার।

ওই অর্থবছরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চীন থেকে ১৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয় ৬৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশে কারখানা খোলার প্রস্তাব

ইউনূসের এই সফরে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা খোলার প্রস্তাব দেওয়ার কথাও জানান খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সফরে চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।

গত বছরর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ইউনূস শপথ নেওয়ার সাড়ে সাত মাসের মাথায় তার প্রথম এই দ্বিপাক্ষিক সফর নিয়ে সরকারের তরফে বেশ কয়েকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ১৬ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, সফরের মূল লক্ষ্য হবে চীনের কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তর।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের ফোকাস থাকবে চীনের কোম্পানিগুলো যেন তাদের কারখানা বাংলাদেশে রিলোকেট করে। প্রধান উপদেষ্টা আগেও চীনের সোলার কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ, বৈশ্বিকভাবে চীন অনেক ট্রেড বেরিয়ারের মধ্যে পড়ে গেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “চীনের শতাধিক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আগে উন্নয়নগুলো ছিল ঋণকেন্দ্রিক। এবারের সফরে আমাদের টার্গেট ছিল বিনিয়োগকেন্দ্রিক। এতে করে কাউকে টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে না, আমাদের টাকা আমাদের এখানেই থাকবে।”

চীন যে ২.১ বিলিয়ন ডলারের যে সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে তার মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বলেও জানান তিনি।

“চীনের ৩০টি কোম্পানি চট্টগ্রামের আনোয়ারার ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল জোনে এ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে সাতশ মিলিয়ন ডলারের ঋণ এই ইকোনমিক জোন গঠনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”

মোংলা বন্দর প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগের বিস্তারিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেহেতু চীন মংলা বন্দর আধুনিকীকরণের কাজ করছে, তারা প্রস্তাব করেছে মংলায় একটি ইকোনমিক জোন তৈরিতে আগ্রহী। এ নিয়ে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”

বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির ২৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা হিসেবে আসবে জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, “এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার টেকিনিক্যাল সহায়তা এবং ১০০ মিলিয়ন ডলার হাসপাতালের জন্য।”

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও বক্তব্য রাখেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh