গত মাসে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে মার্চ মাসে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয়। যা দেশের ইতিহাসে যে কোনো মাসে সর্বোচ্চ। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থন হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে কমে যায় রেমিটেন্স আসার পরিমাণ। তবে দেশের রাজনৈতিক পদ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় রেমিটেন্সের গতিপ্রবাহ। এরপরই রেকর্ড করে রেমিটেন্সে, গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ( প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার) রেমিটেন্স আসে।
এবার সেই রেকর্ডটিও ভেঙে দিলো সদ্য বিদায়ী মার্চ মাস। রেমিটেন্সে নতুন ইতিহাস তৈরি করল প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা এক মাসে ৩২৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, এত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স কখনোই দেশে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী মাস মার্চের পুরো সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন (৩২৯ কোটি ডলার) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে প্রায় ১০ দশমিক ৬১ কোটি ডলার বা ১২৯৫ কোটি টাকা।
গত বছরের মার্চের পুরো সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন বা ১৭১ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সদ্য বিদায়ী মার্চে ১৫৮ কোটি ডলার বেশি এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিটেন্স আসে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে ৪৭০ কোটি ডলার বেশি এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বেড়ে যায় প্রবাসী আয়ের গতি। একইসঙ্গে কমেছে হুন্ডি ও অর্থ পাচার। আবার খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিটেন্সে ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিটেন্স আসার গতিপ্রবাহ। একের পর এক রেকর্ড গড়ছে দেশ।
গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে দেশে। সে রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ল মার্চ মাস। আর এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিটেন্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর সবশেষ মার্চে এলো ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।
মার্চ মাসের মতো একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাই ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভাঙে ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিটেন্স আসে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : রেমিটেন্স প্রবাসী বাংলাদেশি বাংলাদেশ ব্যাংক হালনাগাদ
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh