ট্রাম্পের চাওয়া আসলে কী? যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে দেশটিতে সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।

এই তথ্য জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা ও দুই দেশের  অর্থনীতির জন্য পরিপূরক পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে এই দল।

বুধবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।

'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭% শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়' মতবিনিময়ে বশিরউদ্দীন বলেন, এই প্রতিনিধি দল শুল্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার সরাসরি ধারণা নিয়ে পরবর্তী কর্মকৌশল গ্রহণ করবে।

এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক কাঠামো তুলে ধরবে, পাশাপাশি ডাব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) ফ্রেমওয়ার্কে বাণিজ্যের যে বৈচিত্র্য, সেটা নিয়ে আলোচনা করবে।

“এরপর চুড়ান্ত প্রস্তাব নিয়ে আমি নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে যাব”, বলেন বশিরউদ্দীন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। বাংলাদেশের জন্য এই শুল্ক নির্ধারিত হয়েছিল ৩৭ শতাংশ যা বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এমনিতে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক হার সাড়ে ১৫ শতাংশ, এর সঙ্গে ৩৭ শতাংশ যোগ হলে তা হতো সাড়ে ৫২ শতাংশ। এত শুল্কে পণ্য রপ্তানির কী হবে, এই প্রশ্নের মধ্যেই ক্রয়াদেশ স্থগিতের তথ্য আসছিল সংবাদ মাধ্যমে।

১০ এপ্রিল চীন ছাড়া বাকি দেশের জন্য এই পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করে ট্রাম্পের ঘোষণার পরও উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি।

ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্কের যে নীতিমালা, সেটি স্পষ্ট। কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যত শতাংশ শুল্ক নেয়, ট্রাম্প তার অর্ধেক হারে শুল্কারোপ করেছিলেন। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক নেয় তথ্য তিনি এক অর্ধের হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি ও তার থেকে যে রাজস্ব আয়, তা হিসাব করে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ শুল্কের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। শুল্ক ছাড়া আসে, এমন পণ্যও কম নয়।

বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়াতে কিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর বিষয়ে ভাবছে, তবে এই উদ্যোগে আমদানি বাড়বে কি না এ নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা। তারা সরকারিভাবে আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের দিকে ভারসাম্য ঝুঁকে আছে। গত অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, আমদানি হয়েছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের মতো।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর একপেশে শুল্ক আরোপ করেছে। এটি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে এটা কীভাবে সহনীয় করা যায় সে বিষয়ে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

“শুল্ক সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রায় প্রতিদিন তিনি সরকারের সব মহল, অংশীদার প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বারবার বৈঠক করছেন। এ শুল্ক সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত, অর্থ উপদেষ্টাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব।“

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির যে হিসাব কষেছে, তাতে বেশ কিছু বিষয় বাদ পড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “আমরা তাদের বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছি, নানা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছি, গুগল-ফেসবুকের মতো যত প্লাটফর্ম ব্যবহার করছি, এ সেবা তারা আমলে নেয়নি।

“তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক পণ্য আমদানি করছি। সবকিছু মিলে হিসাব করলে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি দেখানো হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সেটা হবে না। এসব আলোচনা করে পাল্টা শুল্ক মোকাবেলায় কর্মকৌশল তৈরি করছি।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে জন্য কী ধরনের অবকাঠামো দরকার, কোন ধরনের নীতি সহায়তা দরকার, সেসব নিয়েও সরকার ভাবছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।



সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh