টাকা হাতে রাখার প্রবণতা বেড়েছে দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৩

এক বছরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতীকী ছবি
হাতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে দেশের মানুষের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে, গত এক বছরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশের মোট প্রচলনে থাকা মুদ্রা থেকে ব্যাংকে জমানো টাকা বাদ দিয়ে প্রতি মাসে এই সংখ্যা বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) জুন মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, গত জুন শেষে প্রথমবারের মতো সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠেছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রচলনে থাকা নোটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত মোট ছাপানো নোটের পরিমাণ ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বিপরীতে সার্কুলেশন তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। সাধারণত দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাংক শাখার ভল্টে থাকে ১৪ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৯২ থেকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় মানুষের হাতে নগদ টাকা বেশি থাকে। ২০২২ সালের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রচলনে ছিল সর্বোচ্চ ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।
সেখান থেকে কমে গত বছরের অক্টোবরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকায় নেমেছিল। তবে কয়েকটি ব্যাংকের জালিয়াতির তথ্য ফাঁসের পর তা বেড়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকায় ওঠে। এর পর কমতে কমতে গত মার্চ শেষে ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকায় নামে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে মোট আমানত রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ কোটি টাকার মতো। এই আমানতের বেশির ভাগই অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক। ফলে কখনও আমানতের সমপরিমাণ টাকা ছাপানোর দরকার হয় না। এখন অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মোট লেনদেনের অন্তত ৭০ শতাংশ ক্যাশলেস বা নগদবিহীন করার ঘোষণা দিয়েছে। কেননা, ক্যাশলেস হলে একদিকে ব্যাংক খাতে পদ্ধতিগত ঝুঁকি তৈরি হয় না, আবার টাকা ছাপানোর খরচ বাঁচে। নগদ লেনদেন কমাতে বাংলা কিউআরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
তবে ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকের ভল্টের টাকায় প্রতিদিনের গ্রাহক চাহিদা মেটানো হয়। আর প্রচলনে থাকা নোট মানুষ নিজের কাছে, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখেন। দুর্নীতি বাড়লে অনেক সময় প্রচলনে থাকা নোট বাড়ে। আবার হুন্ডির টাকাও যেহেতু প্রবাসীর সুবিধাভোগী নগদে পান, ফলে এ ধরনের টাকাও ব্যাংকের বাইরে থাকে। সব মিলিয়ে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে।