পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে এটিএম বুথগুলোতে নগদ টাকার সংকট চলছে। জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ এটিএম বুথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ও জরুরি প্রয়োজনে বুথ থেকে টাকা তুলতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সব ব্যাংকের প্রায় ৫ কোটি কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহক।
গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক আনিসুর রহমান হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ ভাইয়ের জন্য তার জরুরি টাকা তোলার জন্য বুথে আসেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় ১০টি বুথ ঘুরে টাকা তুলতে পারেননি।
এছাড়া গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) শাহীন আকতার নামে অপর একজন সাংবাদিক জরুরি প্রয়োজনে প্রথমে তেজগাঁও এবং পরে শাহবাগ ও বাংলামোটরে এসেও কোনো বুথে টাকা পাননি। দুপুরের দিকে দু-একটি বুথের সামনে তিনি ‘৫টার পর বুথ বন্ধ’ লেখা ঝুলতে দেখেন। কিন্তু ওই সময়ে বুথের ভেতরে ঢুকে দেখেন, বুথের স্ক্রিন ডার্ক হয়ে আছে অর্থাৎ বুথটি বন্ধ করে রাখা আছে। বুথের সামনে কোনো সিকিউরিটি বা নিরাপত্তাকর্মীও তিনি দেখতে পাননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে, সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি তো আপনারা জানেন। পুলিশ মাঠে না থাকায় নিরাপত্তার একটা ইস্যু তো রয়েছেই। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে এ পরিস্থিতি থাকবে না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান বলেন, নিরাপত্তার ইস্যুই প্রধান। এ জন্যই ব্যাংকগুলো বুথে টাকা সরবরাহ করছে না। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংক বুথে টাকা পাঠায় আউটসোর্সের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সশস্ত্র সুরক্ষিত গাড়িতে করে বুথে নগদ টাকা সরবরাহ করে বেশ কিছু এজেন্সি বা কোম্পানি।
এসব কোম্পানিও এই মুহূর্তে নগদ টাকা বহন করা ও তা বুথে আপলোড বা সরবরাহ করার ঝুঁকি নিচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করে বলেন, এ সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে এবং ব্যাংক স্ব স্ব বুথে আগের মতো নগদ টাকা সরবরাহ করার উদ্যোগ নিবে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসের হিসাবে সারা দেশে কার্ড ব্যবহার হয় ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ২৫০টি। কোনো কোনো গ্রাহক একাধিক কার্ডও ব্যবহার করেন। এসব কার্ড ব্যবহার হয় সারা দেশের ১৩ হাজার ৪২৮টি এটিএম বুথে। এ ছাড়াও ১ লাখ ১৬ হাজার ২৩২টি পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) মেশিন রয়েছে। এসব পিওএস মেশিন ব্যবহার হয় বিপণিবিতান, সুপারশপ ও রেস্টুরেন্টগুলোতে। তা ছাড়া, অনলাইনের কেনাকাটাতেও লেনদেন হয় কার্ডে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপার্জনক্ষম নারী-পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে। অর্থনীতি বড় হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যাংকের গ্রাহক। আরও নতুন গ্রাহক সৃষ্টি করতে ব্যাংকগুলো তাদের নিজ নিজ ব্যবসার পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্চ শেষে দেশের ৬১ ব্যাংকের ১১ হাজার ২৮৯টি শাখায় মোট ১৫ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ২২৭টি সঞ্চয় হিসাব বা ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট এবং ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮৫টি ঋণের হিসাব বা লোন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : এটিএম বুথ নগদ টাকা সংকট গ্রাহকদের দুর্ভোগ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh