টাকা ছাপানো হচ্ছে ‘ব্যাংক রক্ষা করতে’: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

অবস্থান থেকে সরে টাকা ছাপানোর ব্যাখ্যায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ‘ব্যাংক রক্ষার’ কথা বলেছেন।

সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) এর ইফতার মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করতে অনেক টাকা ছাপানো হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সরকার ব্যাংকগুলো রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।”

গত আগস্টে প্রবল গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর টাকা ছাপিয়ে আর ব্যাংককে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। তার মতে, টাকা ছাপানোর কারণেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ৯ সেপ্টেম্বর বলেন, “আপনারা তো জানেন, মূল্যস্ফীতি কেন বাড়ল। (আওয়ামী লীগ সরকার) টাকা ছাপিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে।”

তবে গভর্নর তার অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। নভেম্বরের শেষে খবর আসে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে কয়েকটি ব্যাংককে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আগে বলেছিলাম টাকা ছাপাব না। তবে সেই বিষয় থেকে আমি সাময়িকভাবে সরে এসেছি, পুরোপুরি নয়।”

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে খবর আসে তারল্য সংকটে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই অর্থ ‘হাই-পাওয়ার্ড মানি’ । জামানত ছাড়াই এ তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমকে বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “আগের সরকার যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করছিল, তাতে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ত। এতে সরকার টিকে থাকতে পারত না। টাকা ছাপানো, টাকা পাচারের ফলে অর্থনীতির রিজার্ভ থাকত না, বৈদেশিক লেনদেন ঠিক থাকত না।

“ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাচ্ছিল। শেষের দিকে ব্যাংকগুলো খালি হয়ে বন্ধ হয়ে যেত।”

ডিজেএফবির ইফতারের আয়োজনে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, “হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আদান প্রদান কমেছে তাই প্রবাসী আয় বেড়েছে।”

গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রবাসী আয় লাফ দিয়েছে। গত জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে প্রবাসীরা পাঠান ১৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

এই হিসাবে চলতি অর্থবছরে এই সময়ে ৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।

টাকা পাচার কমেছে বলেও দাবি করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বলেন, “সেটা তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না।”

এ নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ‘রোডম্যাপ’ করতে হবে বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “এক বছরের পরিকল্পনায় হবে না।”

দেশে বিদেশি বিনিয়োগের খরা নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আসতে চাইবে না।”

এত কিছুর মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “জিনিসপত্রের দামও কমেছে।”

পরিকল্পনা কমিশনের অনিয়ম যত প্রকাশ করা হবে তত স্বচ্ছতা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।

বিটিভিতে সরকারের সমালোচনা করে টক শো করার পরামর্শও দেন তিনি।

আয়োজন সংগঠন ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মুহিব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh