Logo
×

Follow Us

বাজেট ২০২০-২১

বাজেটের প্রভাব কলরেটে, বাজারে নেই

কলরেটের কর বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের ক্ষোভ

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২০, ১১:৫৭

কলরেটের কর বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের ক্ষোভ

২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বাজেটে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে এখনো তার প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি। 

কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে যখন পারস্পরিক যোগাযোগ, লেখাপড়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য মোবাইলে কথা বলা ও অনলাইনভিত্তিক হয়ে উঠছে, সেই সময়ে এই সেবার ওপর কর বৃদ্ধি গ্রাহকের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজেটকে নিয়ম রক্ষার ‘একটি রাজনৈতিক বিষয়’ বলে মনে করেন মধ্যবিত্তরা। যার তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না প্রাত্যহিক জীবনে বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ নাগরিকরা। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো ও ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়েছে। বাজেটে ঘোষণা আসার পর এনবিআর এসআরও জারি করায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বাড়তি হারে টাকা কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। 

এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নেন তাহলে তিনি ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকার সেবা পাবেন। বাকি ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে সরকারের পকেটে। 

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আয়-উপার্জনে টান পড়ার মধ্যে এই খরচ বৃদ্ধি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

ময়মনসিংহের গৃহিণী রাবেয়া পারভীন পরিবারের আট সদস্যের ছয়জনই থাকেন ঢাকায়। তাদের সাথে নিয়মিত মোবাইলে যোগাযোগ করেন তিনি। মোবাইলের খরচ বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গৃহিণী বলেন, পরিবারের সবার সাথে যোগাযোগ এখন টোটালি মোবাইলনির্ভর। এমনিতে অনেক খরচ হয় মোবাইলে। কিন্তু কথা তো বলতে হয়ই। সেখানে খরচ বেড়ে গেলে কথা বলা কমিয়ে দিতে হবে।

মোবাইল ফোনে খরচ বাড়ায় পরিবারের সাথে যোগাযোগ নিয়ে চিন্তিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বদরুন্নাহার ঊর্মিসা সাকিব। তিনি বলেন, বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে নিয়মিতই ভিডিওকলে যোগাযোগ করি। মোবাইলেও অনেক সময় কথা বলতে হয়। এভাবে যোগাযোগ মেইনটেইন করা তো খুব জরুরি। কিন্তু ব্যয় বাড়লে ডেটা ব্যবহার কমাতে হবে। অতি প্রয়োজনীয় যোগাযোগটাও আগের মতো থাকবে না। মোবাইলের খরচ বাড়িয়ে গ্রাহকের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করাটা ‘মোটেও ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষার্থী।

এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে রাজশাহীর আব্দুল আউয়াল বলেন, মানুষ যখন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়াচ্ছে তখন সরকার ইন্টারনেট, মোবাইলের কল, সিম কার্ডের খরচ বাড়িয়ে দিল। দেশ যদি ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যায় তাহলে এসবের খরচ বাড়বে কেন? তাহলে কিসের ডিজিটাল বাংলাদেশ?

ছবি: স্টার মেইল

বাজেট বক্তৃতার কিছুটা শোনার সুযোগ হয়েছে বলে জানান পুরান ঢাকার চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারের বাজেটেও কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। আবার অনেক জিনিসের দাম কমেছে। বাজেটে আসলে আমাদের মতো গরীবের জন্য তেমন কিছু করা হয় না। গরীব মানুষকে মারার একটা ব্যবস্থা এটা।

ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা হৃদি হক বলেন, বাজেট ঘোষণা হয়েছে মাত্র তিনদিন হলো । এর প্রভাব কাঁচা বাজারগুলোতে পড়েনি। আজকেও চড়া দাম দিয়ে সবজি কিনতে হয়েছে। সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যদি কমিয়ে রাখতে পারে তাইলে সেটাই হবে মানুষের জন্য সুবিধাজনক বাজেট।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সিঙ্গার ইলেকট্রনিক্সের একটি বিপণন কেন্দ্রের কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, বাজেট সম্পর্কে আমার তেমন আইডিয়া নেই। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বাজেট দিচ্ছেন তাও খেয়াল করা হয়নি। 

বাজেটকে ‘একটি রাজনৈতিক বিষয়’ বলে এ নিয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন ওয়ালটনের একজন বিক্রয় কর্মকর্তা।

জুরাইনের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, বাজেটের পর কিছু পণ্যের দাম কমেওনি, বাড়েওনি। পণ্যের দাম কতটুকু কমে বা পরিবর্তিত হয় সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

ছবি: স্টার মেইল

শ্যামবাজারে পেঁয়াজের আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ বলেন, বাজেটে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপের কথা তিনি শুনেছেন। তবে বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। আরো দুই-চার দিন গেলে পেঁয়াজ-রসুনের বাজারে বাজেটের প্রভাব বোঝা যাবে। 

উত্তর বাড্ডার আলমগীর বলেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকায়, চীনা রসুন ১২০ টাকায়, দেশি রসুন ১০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই দামের মধ্যে বাজেটের কোনো প্রভাব আমি দেখছি না।

মিরপুরে চালের খুচরা বিক্রেতা ঝন্টু জানান, চালের দাম বাড়তি। প্রতি ৫০ কেজির বস্তা পাইজাম চাল ২২০০ টাকা, রশিদ মিনিকেট ২৬০০ টাকা, আটাশ চাল ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দামেও বাজেটের কোনো প্রভাব নেই। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫