
দামের ভয়ে রসুন না কিনেই বাড়ি ছিরছেন এক রাজধানীবাসী। ছবি: সংগৃহীত
নতুন করে আবার দাম বেড়েছে আদা, রসুন ও ডিমের। এদিকে চালের দামেও নেই তেমন স্বস্তি নেই। দেশের সাধারণ মানুষ এবার নির্বাক হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করতে গিয়ে সেটিই বলেছেন।
আজ শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি এলাকা প্রতিবেদকের চোখে এ চিত্র ধরা পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারত থেকে আমদানির খবরে চিনির দাম কিছুটা কমেছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৩০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।
রাজধানী খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারের ডিম বিক্রেতা ইয়াসিন আহমেদ বলেন, পাইকারি বাজারে ডিম নেই। সে কারণেই এখন প্রতি ডজনে ১৫ টাকা বাড়তি বিক্রি করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ডিমের দাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ডজন ছিল।
তিনি আরও বলেন, চাহিদা মতো ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের কারণে ডিমের চাহিদা বাড়ায় এ পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে পাইকাররা।
এদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমেও। প্রতি হালি হাঁসের ডিম এখন ৭৫ টাকা, যা পাঁচ টাকা বেশি। একইভাবে দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম।
বাসাবো কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ দেশে নিশ্চুপ থেকে কেঁদে দিনযাপন করছে। নিত্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দাম প্রতি মাসেই কোনো না কোনো বাহানায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ মাসিক আয় গত তিন বছর আগে যা ছিল বর্তমানে তা আরও কমেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা মহামারির অজুহাতে বেতন উল্টে কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দুঃখের কোনো দাম নেই। টিসিবি পণ্য পেতে গেরেও ধরনা দিতে হয় স্থানীয় নেতাদের। এ কারণে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডও পাওয়া হলো না। সব মিলিয়ে পুরোপুরি নাজেহাল অবস্থায় দিনযাপন করতে হচ্ছে।
মুগদা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা পারভীন আক্তার নামে এক নারী ক্রেতা এক সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ক্ষুধার জ্বালায় মাঝে মাঝে পরিবারকে বিক্রি করে দিতে মন চায়। কিন্তু সমাজের কারণে সেটি করা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে একটা সময় ফুটপাতেও ঠাই মিলবে না।
শহরের বিভিন্ন বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আদা-রসুনের দাম। বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, যা ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল। এ ছাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকা রসুনের দাম এখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে উঠেছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম ২০ শতাংশ এবং আদার দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে বাজারে কিছুটা কমেছে চিনির দাম। আগে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া চিনি এখন খুচরা বাজারে ১০৭ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সরকার-নির্ধারিত দাম সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা, যা দুই মাস আগে নির্ধারণ করা হলেও এতদিন সেই দামে চিনি পাওয়া যায়নি।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন বাজারে গুটি স্বর্ণা জাতের চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। পাইজন ও বিআর-২৮ জাতের মাঝারি আকারের চাল কেনা যাবে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। তবে চিকন বা মিনিকেট চালের দাম কমেনি। এ মানের চাল এখনও ৭২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শীতের সবজির ভরপুর সরবরাহ থাকায় সেগুলোর দাম কম। দুই-তিনটা ছাড়া বেশিরভাগ সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষ করে শিম, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, মুলা ও নতুন আলু কেনা যাচ্ছে এ দামে। অন্যদিকে সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।