শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গেলেই মনসুর সাহেবের মেজাজ বেশ বিগড়ে যায়। মেয়ের খুব শখ এবার নিজের হাতে ঘরে বেগুনি তৈরি করবে। আর মেয়ের আবদার রাখতে গিয়ে মনে করেছিলেন, একটু আগেভাগে বেগুন কিনে রাখবেন। কিন্তু বাজারে গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করতেই চক্ষু চড়কগাছ। বেগুনের দাম ১০০ টাকা কেজি। দাম শুনে কিনবেন কি কিনবেন না, ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর দরদাম করে আধা কেজি বেগুন নিলেন ঠিকই, কিন্তু মনে মনে রাগ উঠল বিক্রেতার ওপর। 

মনসুর সাহেবের বন্ধু চাকরি করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তাকে বেগুনের দামের কথা জানালেন টেলিফোনে। তারপর রাগতঃস্বরে বললেন, এই কি তোমাদের তদারকি? অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলেন, রোজার মাসে বেগুনি খেতেই হবে, এর কি কোনো বাধ্যবাধকতা আছে? বেগুনির বদলে ‘পেঁপেনি’ খাও।

বেগুনের কদর এখন রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে গৃহিণীদের কাছে। কিন্তু দরদাম শুনে মনে হচ্ছে, এ কদর আর রোজার মাসে থাকবে না। মালিবাগের বেগুন বিক্রেতা বেগুনের দাম বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানালেন, রোজার আগে বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। আর চাহিদা বেড়ে গেলেই তো দাম বেড়ে যায়। 

রোজার মাসে বেগুনের কদর বেড়ে গেছে বলে জানালেন রুচিতা রেস্তোরাঁর ম্যানেজার খালেক। কেন কদর বাড়ে? এ প্রশ্নে একই উত্তর-খরিদ্দার চায়। বেগুনির স্বাদ রোজার মাসে কমবেশি সবাই পেতে চায়। কদরের সঙ্গে দামের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান আবুজর গিফারি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক আবু তালেব।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেগুনের দাম শুনেই ভ্যাবাচেকা খেয়েছেন মো. গোলাম মোন্তফা। কেননা, প্রতি কেজি বেগুনের দাম ১০০ টাকা।

এই প্রতিবেদকের সামনে তিনি বিক্রেতাকে অভিযোগের সুরে জিজ্ঞেস করেন, ১০ দিন আগেও যে বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সেটা ১০০ টাকা হলো কীভাবে? এই কয়েকদিনে কী এমন হলো যে বেগুণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল? বিক্রেতা উত্তর দিলেন, ‘জানেন না, শুক্রবার (২৩ মার্চ) থেকে রোজা শুরু। রমজান আসলে বেগুনের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, তাই বলে এত বেশি? 

বিক্রেতা উত্তর দিলেন, ‘সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি। নিলে নেন, না নিলে অন্য দোকানে দেখেন। এত কথা বলার সময় নেই।’

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারে আজ প্রতি কেজি বেগুনের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১০০ টাকা। আকার ভেদে প্রতিটি লাউয়ের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

আকার ভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা দরে।

লেবুর এত বেশি দামের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা মনির মিয়া বলেন, ‘সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে সবাই লেবুর শরবত খায়। তাই লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণেই রমজান আসলেই লেবুর দাম কিছুটা বেড়ে যায়।’

বাজারে আজ প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ ছাড়া, চিনি ১১০ টাকা, মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ৭৪ টাকা, অ্যাংকরের বেসন ৭৫ টাকা, বুটের বেসন ১০০ টাকা এবং মুড়ি ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।