Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

প্রবীণরা নামেই সিনিয়র সিটিজেন

Icon

শাহরিয়ার হোসাইন

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৬

প্রবীণরা নামেই সিনিয়র সিটিজেন

প্রতীকী ছবি

সরকার প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে একটি কর্মপরিকল্পনা করে। কিন্তু সাত বছর পার হলেও সেই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। প্রবীণরা এখনো কেবল নামেই সিনিয়র সিটিজেন হয়ে আছেন। কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি এখনো।

২০১৩ সালে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা করা হয়। পরের বছর নীতিমালা অনুযায়ী ষাট ও ষাটোর্ধ্ব বয়সের প্রবীণদের ‘সিনিয়র সিটিজেন (জ্যেষ্ঠ নাগরিক)’ ঘোষণা করে সরকার। প্রবীণ নীতিমালার আলোকে সিনিয়র সিটিজেনদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে ২০১৫ সালে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে প্রবীণদের সব ধরনের পরিবহনে কম ভাড়ায় যাতায়াত, হাসপাতালগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে আলাদা চিকিৎসাসেবা, আলাদা বাসস্থানের সুবিধা, প্রবীণ স্বাস্থ্য বীমা চালু, নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা ছিল। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলো এ সব নিশ্চিত করবে।

কিন্তু ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রবীণরা ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ আছেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ রয়েছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মৃত্যুহার কমে গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিআইডিএসের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার চার দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৫০ সালে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর এই হার হবে ২০ শতাংশ, অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন হবেন প্রবীণ।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি ওই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওপরই নির্ভর করছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আমরা তাগিদও দিচ্ছি।’

২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা, ২০১৩’ করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ষাট ও ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করেন। ২০১৫ সালের ৪ জুন কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে পাঠানো হয়।

সিনিয়র সিটিজেনদের আবাসন, প্রবীণ ব্যক্তির সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, পরিবহন, প্রবীণ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টির বিষয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি আবাসন/কোয়ার্টারে বাথরুমসহ মাতা-পিতার জন্য একটি আলাদা কক্ষ (প্যারেন্টস রুম), প্রবীণবান্ধব যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা (আলাদাভাবে টিকিট কাউন্টার, বসার স্থান, যানবাহনে ওঠানামার জন্য হুইল চেয়ার/সিঁড়ি ও টয়লেট ইত্যাদি), যাতায়াতের উপযোগী রাস্তা, প্রবীণ স্বাস্থ্য বীমা প্রচলনের কথা বলা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়।

বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচিত কার্ডে ষাটোর্ধ্ব সকল ব্যক্তিকে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। কার্ডের রং হবে ভিন্ন। প্রবীণরা এ কার্ডের মাধ্যমেই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। নির্বাচনে প্রবীণদের জন্য আলাদা বুথ করা হবে। এছাড়া প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে জেরিয়াটিক (বয়স্ক) বিভাগ খোলা হবে। প্রচলিত মেডিক্যাল শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বার্ধক্য স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ও মৃতপথযাত্রী প্রবীণদের জন্য পেলিয়াটিভ (উপশমক) কেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রবীণদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সেই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নারী ও পুরুষ প্রবীণদের জন্য আলাদা কাউন্টার ও ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, সরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের চিকিৎসা খরচ ৫০ শতাংশ ও বেসরকারি হাসপাতালে ওষুধ ছাড়া ১৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে দরিদ্র ও অসহায় প্রবীণদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। জ্যেষ্ঠ নাগরিক কার্ড হোল্ডারদের ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া। পাশাপাশি প্রবীণদের চিকিৎসার সুবিধার্থে ইমার্জেন্সি রোগীদের জন্য হেলথ অ্যাকসেস ভাউচার চালু করা।

প্রবীণদের জন্য ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনার থেরাপি, স্পিস অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন (পুনর্বাসন) সেবা, জরুরি সেবা দিতে বিশেষ রেসপন্স টিম তৈরির কথা বলা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। 

সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত প্রবীণ ব্যক্তিদের চক্ষু, নাক-কান-গলা, দাঁত ইত্যাদি চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করা এবং স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক উপকরণ সহজলভ্য করা হবে।

সরকারি গণপরিবহনে ও বেসরকারি বিমানে প্রবীণদের জন্য ১০ শতাংশ আসন বরাদ্দ, সিটিবাসগুলোতে আলাদা তিনটি আসন সংরক্ষণ, দূরপাল্লার যানবাহনের (বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার, মনোরেল, মেট্রোরেল ইত্যাদি) টিকিটে ৩০ শতাংশ ছাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। কিন্তু কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবীণরা এসব সুবিধা পাচ্ছেন না।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন শুধু তাদের ওপর নির্ভর করছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যাতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় সেজন্য তাদের নিয়মিতই তাগিদ দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫