Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

একদিকে রেমিট্যান্সে পতন, অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানিতে টান

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:১২

একদিকে রেমিট্যান্সে পতন, অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানিতে টান

বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে কম বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিকের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ছবি- সংগৃহীত

সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ে গতি আসছে না। চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে দেশে মাত্র ৩২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে বৈধ পথে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ দশমিক ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।  

অন্যদিকে, গেল সেপ্টেম্বরে দেশের জনশক্তি রপ্তানিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দেওয়া কর্মীর সংখ্যা ১,০৭,৫৭৪ জনে নেমে এসেছে, যা গত ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং গেল আগস্টের চেয়ে ২২.৪২ শতাংশ কম।

ডলার-সংকটের এই সময়ে প্রবাসী আয়ের পতনের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়াকে বড় ধরনের দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

আগস্টে মালয়েশিয়ায় ৪৬,১০৫ জন কর্মী গেলেও সেপ্টেম্বরে তা নেমে আসে মাত্র ২১,৫২০ জনে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান ৪ গন্তব্য- সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান এবং কাতারেও জনশক্তি রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, সৌদি আরবে এই সংখ্যা বেড়েছে সামান্য পরিমাণে। 

শ্রম নিয়োগকারীরা মালয়েশিয়ায় শ্রম রপ্তানি কমে যাওয়ায় পেছনে বিএমইটির হস্তক্ষেপেকে দায়ী করেছেন। নতুন কোটা অনুমোদন না হওয়া জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম বিরূপভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানির জন্য ৭০০ এজেন্সি নিয়োজিত আছে। এরমধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান মিলে একটি সিন্ডিকেট গঠন করেছে। সিন্ডিকেটের প্রভাবে নিয়োগ খাতে স্বচ্ছতা নষ্ট হচ্ছে।

আবুল বাশার আরও উল্লেখ করেন, কয়েকটি সংস্থার কাছে বিএমইটির অগ্রাধিকার থাকায় অনেক সংস্থার জনশক্তি রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, সৌদি আরবের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অসদাচরণের সাম্প্রতিক ঘটনায়ও বাংলাদেশি কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

বিএমইটির পরিচালক (অভিবাসন) এম আবদুল হাই জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে। আমরা সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে তাদের জনশক্তির বার্ষিক চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রপ্তানি করেছি। ফলস্বরূপ, সেসব দেশে এখন চাহিদা কিছুটা কম রয়েছে। তবে, বছরের শেষ নাগাদ এই চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে মালয়েশিয়া

সাড়ে ৩ বছরের বিরতির পর বাংলাদেশ থেকে আবারও কর্মী নেওয়ার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে মালয়েশিয়া। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগ বাংলাদেশ থেকে ৪.৫৭ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ কর্মী ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন।

সেক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎপাদন, নির্মাণ, পরিষেবা, কৃষি, খনি এবং গৃহস্থালী পরিষেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্র। অনুমোদন দেওয়া বাকি ১.২৭ লাখ কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আশা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় আরও ৫ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ পাবে।

বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরীর মতে, বছরের প্রথম আট মাসে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় গত মাসে জনশক্তি রপ্তানির সংখ্যা কমেছে।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানি কাজের চাহিদার ওপর নির্ভর করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাহিদা বাড়লে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। তবে এই সংখ্যা প্রতি মাসে ওঠানামা করে।

বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ

চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৯.৮৯ লাখ কর্মী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এরমধ্যে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি কর্মী, যা মোট সংখ্যার ৩৫ শতাংশ। এরপরে রয়েছে মালয়েশিয়া (২৯ শতাংশ), ওমান (১১ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৮ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (৪ শতাংশ), কুয়েত (৩ শতাংশ) এবং কাতার (৩ শতাংশ)।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশি শ্রমিকদের নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং গৃহপরিচারিকা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং প্লাম্বার হিসেবেও কিছু সংখ্যক স্বল্পদক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয় দেশগুলো।

এছাড়া, ইতালিতে ইতোমধ্যে ১৫,২৪২ জন, যুক্তরাজ্যে ৬,৪৩৪ জন, এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪,২১৮ জন কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন।

তবে এ সত্ত্বেও বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে এখনও কম বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিকের উৎস হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়া দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে।

২০২১ সালে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল দেশের মোট শ্রম অভিবাসনের ২১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ১৭.৭৬ শতাংশে নেমে আসে।

যদিও প্রতিবেদন অনুসারে, স্বল্পদক্ষ কর্মীদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তন আসেনি। ২০২২ সালে এ ধরনের শ্রম অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ৩.২৬ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ছিল ৩.২৮ শতাংশ।

চলতি বছর সবচেয়ে কম ১,০১,৫৫৮ সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল গত মে মাসে। গত বছর রেকর্ড ১১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

রেমিট্যান্সের প্রধান ১০টি উৎসের ৭টি থেকেই আয় কমেছে

সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসে এমন ১০টি উৎস দেশের মধ্যে ৭টি থেকেই আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের উৎস যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় আসা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৯১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ ১০ উৎস হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও বাহরাইন। এই ১০টি দেশ থেকে ৮৬ শতাংশ প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ইউএই, যুক্তরাজ্য, ওমান থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। বাকি সাতটি দেশ থেকে কমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে এসেছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এর মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। এতে প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মোট জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ৫৪ শতাংশই হয়েছে সৌদি আরবে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ ওমানে। তৃতীয় স্থানে থাকা ইউএইতে রপ্তানি হয় ৯ শতাংশ জনশক্তি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫