রয়টার্স: ওয়ালমার্টের ভারতমুখী আমদানি নির্ভরতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৯

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মার্কিন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মার্কিন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট চীন থেকে পণ্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ভারত থেকে আমদানি বাড়ানো শুরু করেছে। মূলত ব্যয় হ্রাস ও সরবরাহ ব্যবস্থার বৈচিত্র্যতা বাড়াতে এমন পরিবর্তন ঘটিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ।
বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে ভারত থেকে ওয়ালমার্টের মোট আমদানি হার দাঁড়িয়েছে২৫ শতাংশ। অথচ যা কিনা ২০১৮ সালের একই সময়ে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। তথ্য বলছে, চীন থেকে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৬০ শতাংশ আমদানি করে, অথচ যা ওই বছরে ছিল ৮০ শতাংশ। এদিকে তবে এখনও চায়না ওয়ালমার্টের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ।
সম্প্রতি চীন থেকে পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি এমন পরির্তনের মূখ্য কারণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ফলে সে দেশের বড় কোম্পানিগুলো এখন ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো বড় দেশগুলো থেকে আমদানি সরবরাহ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালমার্ট নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আন্দ্রিয়া অলব্রাইট বলেন, আমরা সবচেয়ে কম মূল্যে পণ্য আমদানিতে বিশ্বাসী। এর অর্থ হলো, আমরা সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা যেমন চাই। পৃথিবীতে হারিকেন, ভূমিকম্প থেকে শুরু করে নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে কাঁচামালের স্বল্পতাসহ নানা ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের আর তাই একটি দেশ বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়।
এ সময় ওয়ালমার্টের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন অলব্রাইট।
এর আগে ২০১৮ সাল থেকে ভারতে নিজেদের অংশীদারি বৃদ্ধি করছে ওয়ালমার্ট। ওই বছর তারা ভারতের বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্টের ৭৭ শতাংশ অংশীদারিও কিনে নিয়েছিল। পরে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার কোটি ডলার) পণ্য আমদানির অঙ্গীকার করে। যদিও সে লক্ষ্যমাত্রা তারা এখনও অর্জন করেনি। কিন্তু বর্তমানে তারা প্রতিবছর ভারত থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পণ্য আমদানি করছে।
ওয়ালমার্ট ভারত থেকে খেলনা, ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী, বাইসাইকেল থেকে শুরু করে ওষুধ আমদানি করে যাচ্ছে বলেও অলব্রাইট রয়টার্সকে জানান। এছাড়াও প্যাকেটজাত খাদ্য, শুষ্ক শস্য ও পাস্তার মতো জনপ্রিয় উপকরণও তারা আমদানি করে থাকছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারত স্টক মার্কেটের বিচারে চলতি বছর সর্বচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বল্প মূল্যের পণ্য উৎপাদনের জন্য সরবরাহ ও বৃহৎ পরিসরের দিক থেকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা চীনের বিকল্প হতে পারে।
অলব্রাইট বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুবাদে ওয়ালমার্ট দেশটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে অন্যদিকে ছয় দশকের মধ্যে এই প্রথম গত বছর চীনের জনসংখ্যা কিছুটা কমেছে।
ওয়ালমার্ট ২০০২ সাল থেকে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে পণ্য নেওয়া শুরু করে। বর্তমানে দেশটিতে ওয়ালমার্ট গ্লোবাল টেকের আওতায় ফ্লিপকার্ট, ফোন-পে সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এক লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডৌগ ম্যাকমিলানের সঙ্গে চলতি বছরের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠককে নরেন্দ্র মোদি ফলপ্রসূ হিসেবে আখ্যা দেন।
আর সেই বৈঠকের পর থেকে নরেন্দ্র মোদি গত ১৪ মে তৎকালীন টুইটারে (বর্তমানে এক্স) লেখেন, ভারত বিশ্বের জন্য বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠছে দেখে আমি আনন্দিত। ম্যাকমিলন লেখেন, ওয়ালমার্ট ভারতের উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে।
অন্যদিকে ওয়ালমার্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আমাজন এ মাস হতে ভারত থেকে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ পণ্য আমদানি করবে বলে জানিয়েছিল।
এদিকে ভারত নির্ভরতার জন্য চীনের এক বিশেষজ্ঞ চায়নার শ্রমিক মজুরী ও অন্যান্য উৎপাদন সংশ্লিষ্ট খরচ বেড়ে যাওয়াকে দাবি করেছেন।
চীনের বিভিন্ন প্রদেশ অ শহরভেদে নূন্যতম মজুরী উঠানামা করে থাকে। সাধারণ মাসিক ১৪২০ ইউয়ান থেকে শুরু করে বার্ষিক ২৬৯০ ইউয়ান হয়ে থাকে মজুরীর এই হার । যা মার্কিন ডলারে ১৯৮ দশমিক ৫২ থেকে ৩৭৬ দশমিক শূন্য আটের মধ্যে থাকে। অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশটিতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের মজুরী ৯ হাজার রুপি (১৯৮ দশমিক ৫২ ডলার) থেকে ১৫ হাজার (৩৭৬ দশমিক শূন্য আট ডলার) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এর আগে কোভিড-১৯ মহামারির সময় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় দুর্বলতা প্রকট হয়ে আসলে যুক্তরাষ্ট্র সীমিত কয়েকটি বাজারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে আর সে কারণে কৌশলের পরিবর্তন নিচ্ছে ওয়ালমার্ট। ফলে বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে নজর এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির।
এমনকি ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকেও পণ্য নিচ্ছে ওয়ালমার্ট। পাকিস্তান থেকে গৃহসামগ্রী ও বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি বলে জানিয়েছেন অলব্রাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ওয়ালমার্টের জন্য গত বছর ভারতের গুজরাটে অবস্থিত সর্ববৃহৎ বেসরকারি বন্দর মুন্দ্রা দিয়ে ৮ টি পণ্যের চালান এসেছিল।
এ বিষয়ে ফ্রিউল প্রতিষ্ঠানের প্রধান রাজেশ খাড়াবান্দা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এমন সুযোগে ভারতের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চাঙা ভাব কাজ করছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমান করছে চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ আর চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ।