Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

করোনায় হুমকির মুখে দেশের দুগ্ধ খামারশিল্প

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ২০:২৩

করোনায় হুমকির মুখে দেশের দুগ্ধ খামারশিল্প

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন চলছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে। বাংলাদেশেও ২৫ মার্চ থেকে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ঢাকার সাথে প্রতিটি জেলার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন দেশের দুগ্ধ খামারিরা। চাহিদা কম থাকায় প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে।

সারা দেশে লকডাউনের ফলে হোটেল, মিষ্টির দোকান ও চায়ের দোকানগুলোও বন্ধ। খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারায় দেশের অনেক খামার বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে দেশে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত দুগ্ধ খামারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এসব দুগ্ধ খামারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। দেশে দুধের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই আসছে স্থানীয় দুগ্ধ খামার ও গৃহস্থের গাভী পালন থেকে।   

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টন বা ৯৯০ কোটি লিটার দুধ উৎপাদন হয়। সে হিসেবে দৈনিক দুধের উৎপাদন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি লিটার। উৎপাদিত দুধের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রতিদিনই বাজারে বিক্রি হয়।

কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকে বিক্রয়যোগ্য দুধের অনেকাংশ প্রতিদিন অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। দিনদিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিদিন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন খামারিরা।

গ্রামের একজন কৃষক গরুর দুধ বিক্রি করে নিজের পরিবারের খাদ্য এবং তার পোষা প্রাণীর জন্য খাবার কিনেন। বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের দুধ বিক্রি করতে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। কিছু দুধ বিক্রি হলেও তা অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।

এ পরিস্থিতিতে সরকার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করলে দেশের দুগ্ধ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

তথ্য মতে, দেশের বড় কোম্পানিগুলোর প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে গুঁড়ো দুধ, ঘি, মাখন, ফ্লেভারড মিল্ক, আইসক্রিম, ক্রিম তৈরি করার সক্ষমতা আছে। সরকার ও দেশের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো থেকে এ সহযোগিতা না পেলে অচিরেই প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য বলছে, একজন মানুষের প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন। সে হিসেবে দেশে প্রতি বছর ১ কোটি ৫২ লাখ টন দুধের চাহিদা রয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টন। সে হিসেবে জনপ্রতি দুধের চাহিদা মিটছে ১৬৫ মিলিগ্রাম। ফলে এখনো ঘাটতি প্রায় ৫৩ লাখ টন। জনপ্রতি প্রতিদিন ঘাটতি ৮৫ মিলিলিটার।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন তরল দুধ গ্রহণের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দুগ্ধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশে জনপ্রতি দুধ গ্রহণের পরিমাণ আরো কমে যাবে।

জানা গেছে, বাজার থেকে দুধ সংগ্রহে শীর্ষে সমবায় অধিদপ্তরের সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্ক ভিটা)। এর পরই রয়েছে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের আড়ং, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রাণ ডেইরি।

এছাড়া আকিজ গ্রুপ, রংপুর ডেইরি ফুড অ্যান্ড প্রডাক্ট লিমিটেড, আফতাব ডেইরি, ইবনে সিনা, আমেরিকান ডেইরি, এসিআই লিমিটেড ও আবুল মোনেম গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করে থাকে।

এর বাইরে খামারিরা উৎপাদিত বাকি দুধ বিক্রি করে বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, বসতবাড়ি কিংবা স্থানীয় বাজারগুলোতে। পরিস্থিতির কারণে বড় কোম্পানিগুলো তাদের সংগ্রহ যেমন কমিয়েছে, তেমনই মিষ্টির দোকান কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিক্রি প্রায় বন্ধের পথে। চলমান পরিস্থিতিতে সহযোগিতা না করলে সামনে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে।

একদিকে দুধ বিক্রি না হলেও বাজারে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বাজার আগে গো-খাদ্য পাতা ভুষি বিক্রি হতো প্রতি বস্তা ৮শত ৫০ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১২শত টাকা। ফলে খামারে ব্যয় বেড়ে গেছে শত গুণ। এ অবস্থায় উপজেলার খামারিরা চরম সংকট কাল অতিবাহিত করছে।

২৫ মার্চে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) প্রেসিডেন্ট ইমরান হোসেনের ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ১২০ লাখ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এতে দেশের খামারিদের প্রতিদিন প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এক মাস এ অবস্থা চলতে থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাস সমস্যায় আক্রান্ত পরবর্তী সময় দেশে যাতে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের সংকট দেখা দিতে না পারে। তাই বর্তমানে দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য মজুত করলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি দেশের খামারশিল্পকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫