Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

সৌদি আরবে বাড়ছে তেল-বহির্ভূত বিনিয়োগ

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৪৮

সৌদি আরবে বাড়ছে তেল-বহির্ভূত বিনিয়োগ

সৌদি আরবের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরব সরকার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে এবং উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে আয় ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। তবে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো লাভের খাতায় চললেও তেল খাতে বিনিয়োগ কমিয়েছে সৌদি আরব, বাড়িয়েছে অন্যান্য খাতে।

গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) ও কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন দেশগুলোর ব্যাংক প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা মুডি’স অ্যানালাইটিকস বলছে, ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব ও ওমানে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতের সম্প্রসারণে সর্বনিম্ন অস্থিরতা দেখা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কাতারের সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরব শীর্ষ তিনের মধ্যে স্থান পেয়েছে। মুডি’স রেটিংয়ের কো-ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্লাদলেন কুজনেতসভ বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরাক, কাজাখস্তান ও আজারবাইজানে জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর সরকার বাণিজ্য বহুমুখীকরণে তহবিল সরবরাহ করছে। অন্যান্য ব্যাঘাত বাদ দিলে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি আগামী বছরগুলোয় ৩-৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য হলো নিওমের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসন ও পর্যটন খাতকে বাড়িয়ে জ্বালানি তেলনির্ভরতা কমানো। ব্যাংকগুলো দেশটির অর্থনীতির তুলনায় ছোট হলেও জ্বালানি তেল-বহির্ভূত উদ্যোগগুলোকে ক্রমবর্ধমান হারে অর্থায়ন করছে এবং তাদের উচ্চ মানের ঋণ রয়েছে।

সৌদি আরব চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করে জিসিসি বন্ড বাজারের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে দেশটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নে ঋণ বাজারকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেছে। কাজাখস্তান ও আজারবাইজানসহ সিআইএস দেশগুলোর সঙ্গে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত ও বাহরাইনসহ জিসিসিভুক্ত দেশের সরকারগুলো উচ্চাভিলাষী বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে হাইড্রোকার্বনের ওপর তাদের নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে।

সম্প্রতি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করেছে সৌদি আরব। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ১১ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে রিয়াদ। এ ছাড়া বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬.৭ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। সৌদির অর্থনীতিতে জ্বালানি তেলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও আগামী বছরগুলোয় এ খাতে খরচ কমাবে দেশটি। অন্যদিকে ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি তেল-বহির্ভূত বৈচিত্র্যময় খাতে ১ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে। 

অগ্রাধিকারের এ পরিবর্তনকে ‘কেপেক্স সুপার-সাইকেল’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটি। এটি এমন এক প্রবণতা যেখানে দীর্ঘমেয়াদি বড় ব্যয়ের প্রকল্পে নতুন প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক পরিবর্তন গুরুত্ব পেয়ে থাকে। মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, আরব বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনীতি জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতে বিনিয়োগ তহবিলের প্রায় ৭৩ শতাংশ খরচ করতে পারে। এর আগে এ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য হার ছিল ৬৬ শতাংশ। বর্তমানে রিয়াদের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৪ হাজার কোটি ডলার কমে ২৮ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিশোধন দুটিই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম ৮০-৮৫ ডলারের মধ্যে থাকায় ও উত্তোলন প্রতিদিন ৯০ লাখ ব্যারেলে নেমে যাওয়ায় সৌদি সরকারের বাজেটের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। এ বছর দেশটির বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪.৩ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে, যা গত বছরের ২ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। ঘাটতির প্রায় ২.৬ শতাংশীয় পয়েন্টের কারণ হলো খরচ বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেল থেকে কম আয়। তবে প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি আরামকোর নিট মুনাফা বেড়েছে। কোম্পানিটি এ সময় ২ হাজার ৯১০ কোটি ডলার নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬.৫৯ শতাংশ বেশি।

সৌদি আরবের অর্থনীতি যে বিকশিত হচ্ছে তা কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি থেকে বোঝা সম্ভব। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় গত জুলাইয়ে সৌদি আরবের বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১৫.৭২ শতাংশ। মাওয়ানি নামে পরিচিত সৌদি বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, দেশটির বন্দরগুলো জুলাইয়ে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৫ কনটেইনার গ্রহণ করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২। ওজনের হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাইয়ে হ্যান্ডলিং ৯.১১ শতাংশ বেড়ে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টনে পৌঁছেছে।

প্রসঙ্গত জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতগুলো জ্বালানি তেল খাতের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল হয়। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হয় এবং জনসম্পদ বাড়ে। সৌদি ব্যাংকগুলো তাই দেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫