Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

সহজ চাষে লাভজনক মাছ ‘তেলাপিয়া’

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:২৬

সহজ চাষে লাভজনক মাছ ‘তেলাপিয়া’

তেলাপিয়া মাছ। ছবি: সংগৃহীত

তেলাপিয়া বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। এই মাছ অনেক পুষ্টিকর ও সহজে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের সব বাজারেই তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যায়। স্বল্প খরচ ও কম রক্ষণাবেক্ষণ করা লাগে বিধায় অনেক শিক্ষিত বেকার এই মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ ৬০-৭০ বছর আগেও এই ভূখণ্ডের মানুষ তেলাপিয়াকে চিনত না। 

এই ভূখণ্ডে তেলাপিয়া কীভাবে এলো?

জানা যায়, আফ্রিকা থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম তেলাপিয়া এসেছিল। এটিকে বলা হতো মোজাম্বিক তেলাপিয়া যার গায়ের রঙ কালচে বর্ণের। এই প্রজাতির তেলাপিয়া অনেক পোনার জন্ম দিলেও এদের শারীরিক বৃদ্ধি ছিল কম। এরও প্রায় ২০ বছর পর ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসে নাইলোটিকা নামে তেলাপিয়ার আরেকটি জাত। ১৯৯৪ সালে ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে আসে গিফট তেলাপিয়া। নাইলোটিকার তুলনায় এই তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশ বেশি। এই তেলাপিয়াই পরে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে বাংলাদেশে গিফট তেলাপিয়ার ‘মনোসেক্স’ জাতটি চাষ করা হচ্ছে।

মনোসেক্স তেলাপিয়া কী?

সহজ ভাষায় ‘মনোসেক্স’ প্রক্রিয়াটি হচ্ছে মাছের এক লিঙ্গে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া। হরমোন প্রয়োগ করে তেলাপিয়া মাছের সব পোনাকে মনোসেক্স করা হয়। অর্থাৎ সব পোনাকে পুরুষ পোনায় রূপান্তর করা হয়। পোনার বয়স যখন শূন্য বা একদিন থাকে তখন থেকে পরের ২১-২৩ দিন পর্যন্ত হরমোন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয়। এই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর, সব নারী পোনা পুরুষ পোনায় পরিণত হয়। অর্থাৎ তারা ডিম দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন এই মাছকে মনোসেক্স জাত হিসেবে উৎপাদন করা হয়।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭শটি হ্যাচারি রয়েছে যেগুলোতে তেলাপিয়া মাছের মনোসেক্স পোনা উৎপাদন করা হয়। এসব হ্যাচারি থেকে বছরে ৬-৭শ কোটি পোনা উৎপাদিত হয়।

মনোসেক্স তেলাপিয়ার কদর বেশি

বাংলাদেশে যেসব মাছ উৎপাদন হয় তার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য থাকে সেটি হচ্ছে সব সময় ফিমেল বা স্ত্রী প্রজাতির মাছটি আকারে বড় হয়। কারণ এগুলো ডিম দেয়। কিন্তু তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে ফিমেল বা স্ত্রী মাছটি আকারে ছোট এবং পুরুষ মাছটি আকারে বড় হয়। ডিম না হওয়ার কারণে পুরুষ মাছের শরীরে মাসল বা পেশি বেশি থাকে। যার কারণে বেশি মাছ বা প্রোটিন পাওয়া যায়। এ কারণেই যখন পোনাগুলোর লিঙ্গ শনাক্ত করা যায় না, সে সময়েই হরমোনযুক্ত খাবার দিয়ে সব পোনাকে পুরুষে পরিণত করা হয়। এটাকেই মনোসেক্স তেলাপিয়া বলা হয়।

চাষ পদ্ধতি

তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করতে চাইলে মধ্যম গভীরতার একটি জলাশয় থাকতে হবে। পুকুরটি অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে এক কেজি পরিমাণ চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। এর তিন দিন পর ১০০ গ্রাম টিএসপি সারের সঙ্গে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার দেওয়ার পর পানির রঙ যখন সবুজ হবে তখন সেখানে তেলাপিয়ার মনোসেক্স জাতের পোনা ছাড়তে হবে। 

প্রতি শতকে ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যায়। লক্ষ রাখতে হবে যাতে পোনার ওজন ৫-৬ গ্রাম পরিমাণ হয়। এসব পোনাকে সপ্তাহে ৫-৬ দিন খাবার দিতে হবে। 

২৫-২৮% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত দিলে বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চার থেকে ৫ মাসের মধ্যে প্রতিটি তেলাপিয়ার ওজন ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজনের হয়। মাছের ওজন ৩০০ গ্রামের মতো হলেই সেটি আহরণ করতে হবে। তেলাপিয়া মাছ আহরণের ক্ষেত্রে পুরো পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। জাল দিয়ে মাছ ধরলে ৬০% মাছ ধরা সম্ভব। বাকি ৪০% মাছ পুকুরের তলায় থেকে যায়। যার কারণে সব মাছ ধরতে হলে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। এ কারণে যেসব পুকুর সহজেই শুকিয়ে ফেলা যায় সে রকম পুকুরে তেলাপিয়া চাষ করা উচিত। এক বার মাছ ধরার কিছুদিন পর একই পুকুরে আবার মাছ চাষ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে যদি পুকুরের তলদেশে বর্জ্য বেশি থাকে তাহলে সেগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে।

লাভজনক মাছ 

চাষের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া খুবই লাভজনক। তবে সম্প্রতি বাজারে এই মাছের দাম কমে যাওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা।

তবে এখনও এটি অন্যান্য মাছের তুলনায় খরচ ও বিক্রির ভিত্তিতে লাভজনক বলে জানান তারা। প্রতি একর জলাশয় বা পুকুর থেকে চার থেকে পাঁচ মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়। আর এই পরিমাণ জলাশয়ে তেলাপিয়া চাষে খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মতো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫