
পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতার কারণে আনুমানিক ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

খন্দকার রফিকুল বলেন, এখনো অস্থিরতার কারণে গার্মেন্টস খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি নিরূপণ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
সরকার ও সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ নেতারা বলেন, সরকার, মালিক, শ্রমিক, সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতায় বিজিএমইএ বোর্ড বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।
নেতারা বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয় ও বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। বিজিএমইএ এর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতারা এখন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রাখছেন।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের সক্ষমতা ছিল না। বিজিএমইএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ৩৯টি পোশাক কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিজিএমইএ নিম্নোক্ত কিছু বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে-
১. শিল্পে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
২. কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করা।
৩. চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্ণ লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা।
৪. এই ক্রান্তিকালে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা।
৫. ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব না রাখে।
৬. কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
৭. শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা।
৮. শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা।
৯. সকল ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণীকরণ না করা এবং ঋণ পরিশোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৪৪ তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৪ এর ন্যায় পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ প্রদান করা।
১০. তৈরি পোশাক কারখানাসমূহের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন হতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নিমিত্তে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা।
১১. ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা।
১২. পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা।
১৩. পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসি’র ব্যবস্থা করা।
১৪. শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করলে পোশাক তৈরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কয়েকটি খাতের শ্রমিকদের কাছ থেকে নানা দাবি উঠতে শুরু করে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় প্রায় ১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকে।
আশুলিয়া, জিরানী, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নামেন। কারো কারো বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও আগুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
এরপর মালিকরা অস্থিরতা এড়াতে ও সম্পত্তি রক্ষায় একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের ওপর হামলার কারণে শিল্প পুলিশের সদস্যরা শিল্প এলাকায় টহল দেওয়া বন্ধ রাখে।
এ ছাড়াও, সে সময় সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসনে রদবদল হচ্ছিল। প্রায় সব থানা অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।
ফলে মালিকরা কারখানা চালাতে সাহস পাননি।
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায়ও কারখানা চালানো যায়নি। তাই আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবোর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ছিল। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা ভাঙচুরও করেছিলেন।