Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

অস্থির বাজার

Icon

দীপংকর গৌতম

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫২

অস্থির বাজার

সবজি বাজারের। ফাইল ছবি

বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। মুদি দোকান থেকে কাঁচা বাজার- সবখানেই এক অবস্থা। কোনো জিনিসের দাম ইচ্ছামতো হাঁকলেই হলো- সেটাই দাম হয়ে যাচ্ছে। চাল, মাছ, ডাল এক বাজারেই দোকানভেদে এক এক দাম। বাজারে যাওয়ার আগে বলা সম্ভব হয় না কোন জিনিসের দাম কত টাকা। 

করোনাকাল থেকেই বাজার স্থিরতার জায়গায় থাকেনি। দেশের মানুষের অবস্থা এখন অনেকটা চৈত্রের খরায় সদ্য সেচা পুকুরে কিলবিল করা ডানকানি মাছের পোনার মতো। বাজারে লাগাম টানার লক্ষণ নেই। সেদিন হঠাৎ করেই ডিমের ডজন ১৮০ টাকা হয়ে গেল। কমে ১৫০ হলেও বাজার ভেদে দামে এখনও ভিন্নতা রয়েছে। শুধু ডিমের দাম নয়, সব জিনিসের চিত্র একই রকম। ইতিপূর্বে সরকার একবার টাস্কফোর্স, একবার বিভিন্ন টিম পাঠানোর কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে আগস্ট অভ্যুত্থানের পর জনগণ প্রত্যাশা করেছিল- বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু সেই আশার প্রদীপ আর জ্বলছে না। পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সব উদ্যোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এখনও সক্ষম হয়নি। হঠাৎ বেড়ে গেছে মুরগির দাম। আলু, পেঁয়াজসহ প্রতিটি তরিতরকারির দাম সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে। চালের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। এই অবস্থায় মানুষ রীতিমতো দিশাহারা। সরকার ১৯টি পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছে না। 

বিগত সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু স্বস্তি আসেনি। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারকি ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেও কোনো কাজে আসছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুদদারির কারণে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহে মসুর ডাল, মুগ ডাল, আদা, এলাচি, খাসির মাংস, দেশি মুরগি ও চিনি এ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এসব পণ্যের দাম আগেই অনেক চড়া ছিল। প্রতিশ্রুতির তালিকায় দিন যোগ হয় পণ্যের দাম বাড়ে। বাড়ে না মানুষের আয়। ফলে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, ক্রমেই তা হতাশায় রূপ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। 

বিগত সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী ছিল- ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। সুস্থ থেকে অসুস্থ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব মানুষের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান হলো খাদ্য। এ খাদ্য শুধু পেটের খিদে নিবারণ করলে হয় না, শরীর ও বয়স অনুযায়ী প্রয়োজন হয় পুষ্টিকর খাবারের। পুষ্টিকর খাবার বলতে আমরা শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, মিনারেলস, জিংক, আয়রন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবারকে বুঝি। বড়দের চেয়ে বাড়ন্ত শিশুদের এসব খাবারের চাহিদা অনেক বেশি। বড়দের কর্মক্ষম রাখতে আর শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ সাধন ও হাড়ের গঠনসহ নানা প্রয়োজনে পুষ্টির দরকার হয়। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পদতলে মানুষের জীবন পিষ্ট। পাগলা ঘোড়ার দৌড়ের মতো বাড়ছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে দৈনন্দিন পারিবারিক চাহিদা মেটাতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা পূর্বের তুলনায় খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুরা পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্স, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন- প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব পালন করলে সংকট নিরসন কঠিন হবে না। 

ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তোলে। বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ আরও বাড়াতে হবে। ইউএসএআইডি বলছে, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মা ও শিশুরা আগে থেকেই পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা খাবারের পরিমাণ কমালে সামনে পুষ্টিহীনতার অবস্থা আরও বাড়তে পারে। আমাদের দেশে গরিবের প্রোটিন বলা হয় ডিম ও দুধকে। কিন্তু এসব পণ্য ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশু-কিশোরদের ওপর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৫৪ শতাংশ প্রাক-স্কুলগামী শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং ৫৬ শতাংশ শিশুর ওজন কম যার মূলে রয়েছে পুষ্টিহীনতা। আর এ অপুষ্টির কারণে আগামী প্রজন্ম তথা শিশুরা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়বে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব পদক্ষেপের কথা বলেছে তা কার্যকর করতে কত সময় অপেক্ষা করতে হবে জানা নেই আমাদের।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫