
মিশরীয় ফাউমি। ছবি: সংগৃহীত
গত চার দশকে বাংলাদেশে পোল্ট্রির বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রসার লাভ করলেও মানুষের মাঝে গ্রাম্য পরিবেশে ছেড়ে পালা দেশি মুরগির কদর এখনও তুঙ্গে। কিন্তু বেশি উৎপাদনশীল না হওয়ায় দেশি মুরগি এ দেশের মানুষের ডিম ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না।
তবে এ দেশে দেশি মুরগির বিকল্প হিসেবে এমন একটি মুরগির জাতের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যা যে কোনো উন্নত জাতের চেয়ে অধিক উৎপাদনশীল এবং একই সঙ্গে ছেড়ে পালনের উপযুক্ত। মুরগির এই জাতটির নাম ‘ফাউমি’। এটি প্রাচীন মিশরীয় মুরগির একটি জাত। এদের নামকরণ হয়েছে মিশরের ‘ফাইয়াম’ প্রদেশের নামানুসারে। কয়েকশ বছর ধরে মুরগির এই জাতটি মিশরের বিখ্যাত নীল নদ ও এর আশপাশের অঞ্চলে পালিত হয়ে আসছে।
ফাউমি মুরগি মূলত বন্য মুরগির একটি হাইব্রিড জাত। এরা গৃহপালিত অন্যান্য মুরগির সঙ্গে প্রজনন ঘটায়। ‘ফাউমি’ আকারে ছোট, ঘন কালো বড় বড় চোখ এবং উঁচু লেজবিশিষ্ট ডিম দেওয়া মুরগির জাত। এরা ছোট আকারের সাদা রঙের ডিম দেয়। সাধারণত এদের কুচে (ডিমে ‘তা’ দেওয়া) হওয়ার প্রবণতা কম। তাই ইনকিউবেটরে এদের ডিম থেকে সহজেই বাচ্চা ফোটানো যায়।
ফাউমি মুরগি অবিশ্বাস্যভাবে রোগ প্রতিরোধী। সহজে এরা রোগে আক্রান্ত হয় না। এদের ম্যাচুরিটি বেশ দ্রুতই আসে। মোরগগুলো অবিশ্বাস্যভাবে পাঁচ বা ছয় সপ্তাহের মধ্যেই ডাক দেয় এবং মুরগি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে। গড়ে একটি মোরগ প্রায় ১.৮ ও একটি মুরগির ওজন প্রায় ১.৫ কেজি হয়। এদের বেঁচে থাকার জন্য সামান্যই খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
আয়-ব্যয় ও সম্ভাবনা
ফাউমি মুরগি পালনে কাঠের ঘর উপযুক্ত। সে ক্ষেত্রে উপরে হালকা টিনের ছাউনি দিয়ে ৮ বর্গফুটের একটি কাঠের ঘর বানালে ১৫টি মুরগি অনায়াসে থাকতে পারবে। ৫ হাজার টাকা খরচে এ ধরনের ঘর বানানো সম্ভব। সরকারি ফার্ম থেকে তিন মাসের ওপর বয়সের মুরগি কিনতে পাওয়া যায়। যার এক একটির দাম পড়বে ১৫০-২০০ টাকা। যেহেতু ছেড়ে পালা পদ্ধতিতে ফাউমি ভালো, ফলে প্রতিদিন নামমাত্র খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে। আনুমানিক প্রতিটার জন্য ১৫-২০ গ্রাম সুষম খাবার দেওয়া ভালো। ছেড়ে পালা অবস্থায় ফাউমি মুরগি বছরে ১০০-১৩০টি ডিম পাড়ে। অর্থাৎ বছরে ১৫টি মুরগির ডিম বিক্রি করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া প্রতিটি মুরগি কেজিপ্রতি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। একজন উদ্যোক্তা যদি একটু বড় পরিসরে মুরগির খামার করেন তবে তিনি অনায়াসে বছরে ৩-৫ লাখ টাকার লভ্যাংশ তুলতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
ফাউমি মুরগি পালনের সুবিধা
১. দেশি মুরগির মতো খাঁচার বাইরে ছেড়ে রেখে পালা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
২. দেশি মুরগির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ডিম দেয়। ডিম পাড়া শেষে ‘তা’ দিতে বসে না।
৩. বাচ্চা ফুটানোর ডিম অধিক দামে বিক্রি করা যায়।
৪. ফাউমি মুরগি পালনে দেশের সামগ্রিক ডিম উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব।