
উদ্যোক্তা শারমিন আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত
কলেজে পড়ার সময় থেকেই নিজে ডিজাইন করে জামা তৈরি করতেন। অল্প টাকার গজ কাপড়েও সুন্দর ডিজাইনে বানানো জামা দেখে প্রশংসা করতেন অনেকেই। জানতে চাইতেন, কোথায় থেকে নিয়েছ? ব্লকের কাজটি ভালো পারেন বলে এটা নিয়েই শুরু করলেন উদ্যোগের যাত্রা।
নওগাঁর পাড়াগ্রামের মেয়ে শারমিন আফরোজ। মাধ্যমিক শেষে রাজশাহী শহরে পাড়ি জমান, এখানেই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনার বাকী পাঠটা সমাপ্ত করেন। বর্তমানে স্বামীর চাকুরীর সুবাদে থাকছেন নারায়ণগঞ্জ।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন ঘরে। চাকরি করার সুপ্ত ইচ্ছে থাকলেও একমাত্র শিশু কন্যার জন্য চাকরি করার সুযোগ নেই। স্বামীর বার্তা ছিল চাকরি করলে মেয়েকে দেখাশোনা করবে কে? সেই বার্তা থেকেই ভাবতে লাগলেন ঘরে বসে কিছু করার। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মেয়ে ছোট বলে শুরু করলেন পার্টনারশিপে উদ্যোগের কাজ। পার্টনারশিপে শুরু করলেও ২০২১ সালের জুলাইয়ে এককভাবে শুরু করেন উদ্যোগ ‘রাজকন্যা বিডি’। একমাত্র সন্তান মেয়ে, তাই উদ্যোগের নামটাও রাখেন রাজকন্যা যোগে।
শারমিন নিজস্ব ভাবনায় তৈরীকৃত ব্লক নিয়ে কাজ করেন। কুর্তি, ব্লাউজপিস, বেবি ড্রেস, ব্লকের থ্রিপিস, ব্লক শাড়ি, হ্যান্ডপেইন্ট ড্রেস, ম্যাচিং ড্রেস, শাড়ি, থ্রিপিস, কুর্তিসহ ব্লকের সব ধরনের পণ্য নিয়ে উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন শারমিন।
উদ্যোক্তা হতে গিয়ে ‘কাপড় বেচে খাই’সহ নানান কটুক্তির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তবু থেমে যাননি। মানুষের কটুক্তি যেন কাজ করায় আগ্রহী করে তুলেছে কয়েকগুণ। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্টেই এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাইরের লোকের বলে বেড়ায় কাপড় বিক্রি করে খাই।’ নিজের উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
দশ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মাসিক আয় ষাট হাজার টাকার বেশি বলে জানান শারমিন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর মাসদাইর গাবতলী থেকে কাজ করছেন। তার পণ্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু অনলাইনভিত্তিক বিজনেস, ইন্টারনেট না থাকায় পেইজের রিচ অনেক কমে গেছে। অর্ডার পাইনি। পার্সেল ডেলিভারি দিতে পারিনি। পরে এসব ক্ষতি পুষাতে হয়েছে নিজ পকেট থেকেই। তখন লসের মধ্যে পড়েছিলাম, এখনো উঠার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে প্রত্যাশা থাকবে যেন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট না হয়।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বপ্ন আমার একটা শপ হবে। রাজকন্যা বিডি একটা ব্র্যান্ড হবে।