
ভার্চুয়াল মুদ্রা (বিটকয়েন)। ছবি: সংগৃহীত
বিটকয়েন মূলত এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। অনলাইনে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর পাশাপাশি কেনাকাটা করা যায় বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। বর্তমানে বিটকয়েনের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি ও ভারতের মতো বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এই ডিজিটাল মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়েছে।
অনলাইনে কেনাকাটায় বিটকয়েন ছাড়াও লাইট কয়েন, পিয়ার কয়েন, রিপল, ড্রাক কয়েন, ডগ কয়েন, নেম কয়েন ইত্যাদি ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করা যায়। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে অনলাইন বিশ্বে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামের জনৈক সফটওয়্যার ডেভেলপার বিটকয়েন আবিষ্কার করেন। এটিই বিশ্বের প্রথম ভার্চুয়াল কারেন্সি বা মুদ্রা।
এখনো বৈধ বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা হিসেবে
স্বীকৃতি পায়নি বিটকয়েন। মূলত নিরাপত্তা ও বিকেন্দ্রীকরণ সুবিধার কারণে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ভার্চুয়াল মুদ্রাটি কম্পিউটারের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়। এর সাংকেতিক প্রতীক হলো ইঞঈ, এবং এর ক্ষুদ্র একক সাতোশি।
বিটকয়েন কোনো ক্যাশবাক্স বা ব্যাংকে রাখা যায় না। এই মুদ্রার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাও নেই। এটি অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। যেহেতু এটি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেম, তাই অনলাইনে সব ধরনের বৈধ ও অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নেই, তাই বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করলে কে বা কারা করছে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়
সাধারণত আইনশৃঙ্খলা ফাঁকি বা অপরাধমূলক কাজে বিটকয়েন ব্যবহার করা হয়। মাদক কেনাবেচা, অস্ত্র ব্যবসা এমনকি খুনের কাজেও বিটকয়েন ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডার্ক ওয়েবে বিটকয়েনের মাধ্যমে সব লেনদেন করা হয়। ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের একটি গোপন অন্ধকার জগৎ। জনপ্রিয়তা ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে বিটকয়েন সংগ্রহ করে রাখছেন।
কীভাবে সংগ্রহ করতে হয়
বিটকয়েন সংগ্রহ করতে একজনকে একটি অনলাইন ওয়ালেটের বিপরীতে একটি ইউনিক আইডি বা অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়, যেখান থেকে গ্রাহক বিটকয়েন খরচ বা জমা করতে পারে। অনেক উপায়ে বিটকয়েন উপার্জন করা যায়, যেমন কিছু ওয়েবসাইটের কাজ করে, কোনো মুদ্রাবিনিময়ের মাধ্যমে, কোনো কিছু বিক্রয়ের মাধ্যমে। তবে বিটকয়েন উপার্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং করা।
ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার ইন্টারনেটের জগতে অনেকটা শেয়ার বা মুদ্রার মতো। নিয়মিত এর দর বা বিনিময় মূল্য ওঠানামা করে। এটি নিজেই ডলার বা ইউরো- এসব আন্তর্জাতিক মুদ্রার মতো বিনিময়মাধ্যম। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে সীমিত পরিসরে বিটকয়েনকে ব্যবহার করা হয় নিজস্ব মুদ্রার মতো। বিটকয়েনের লেনদেন ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। পিয়ার টু পিয়ার যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর ইউজার রেফারেন্স অনুযায়ী লেজার হালনাগাদ করে দেয়। অর্থাৎ কোনো ক্লিয়ারিং হাউসের খবরদারি নেই এখানে। ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রক্রিয়ায় বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন হয়।
বিটকয়েনের বাজার
আমাদের দেশে এখনো বিটকয়েনের ব্যাপক ব্যবহার চালু হয়নি। বিশ্বে এখন ৭০২ কোটি ডলারের ওপর ভার্চুয়াল মুদ্রাবাজার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৭টির বেশি দেশে বিটকয়েন ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন মাইনিংয়ের মাধ্যমে এই মুদ্রা উৎপাদন করা হচ্ছে। নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রতি ১০ মিনিটে অ্যালগরিদম সমস্যার সমাধান করায় ২৫ মাইনারকে দেওয়া হচ্ছে বিটকয়েন। বর্তমানে এক কোটি ২৪ লাখ বিটকয়েন প্রচলিত আছে। এর মোট বাজারদর এখন ৬২০ কোটি ডলার।