
নারী উদ্যোক্তা মোরশেদা সুলতানা লিমা।
মোরশেদা সুলতানা লিমা, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, তার জীবন শুরু হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বাবার চাকরির সুবাদে জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও রাজশাহীতে কেটেছে তার শৈশব ও শিক্ষাজীবন। পাঁচ বোনের মধ্যে চতুর্থ লিমা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করে ঢাকায় একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ১৯৯৭ সালে চাকরি শুরু করেন।
তবে ২০০৮ সালে একমাত্র ছেলের জন্মের পর চাকরি ছেড়ে দেন এবং শুরু করেন বাসায় কোচিং ও টিউশনি। দীর্ঘদিন এভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু করোনার সময়ে চাকরি ও কোচিং বন্ধ হয়ে গেলে পড়েন চরম বিপাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করেন। পিঠা ও হাতের কাজের পণ্যের সমন্বয়ে চালু করেন ‘টিপটপ নকশিময় রান্নাঘর’। এর পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে ফেসবুকে তার পেইজের ফলোয়ার সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
মোরশেদা বলেন, ‘যেকোনো কাজের শুরুতেই বাধা আসবে। আমার ক্ষেত্রে পরিবারের সম্মতি থাকলেও স্বামীর সাপোর্ট ছিল না, আত্মীয়স্বজনও ভালো চোখে দেখেনি। অনেকে মনে করত, সংসারের অভাবের কারণে আমি খাবার বিক্রি করছি। তবে এখন সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করে।’
তার ‘টিপটপ নকশিময় রান্নাঘর’ উদ্যোগের মাধ্যমে নারীদের পোশাক, কুশন ও বেড কভার, নকশি কাঁথা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, খেজুর ও আখের গুড়, মধু, ঘি এবং সজনে পাতার গুঁড়ার মতো পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এই উদ্যোগ শুধু তার নিজের সফলতাই নয়, উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার বেশ কয়েকজন নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছে।
রাজশাহীর বাঘার এক গৃহবধূসহ উত্তরাঞ্চলের কিছু কর্মী মোরশেদার উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেছেন। রাজধানীর বনশ্রী থেকে অনলাইনে কাজ পরিচালনা করা মোরশেদা বছরে একবার কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মোরশেদা বলেন, ‘আমার একটাই স্বপ্ন- খাবার ও হাতের কাজের পণ্যের আলাদা দুটি ব্র্যান্ড তৈরি করা।’
মোরশেদার এই গল্প শুধুই ব্যক্তিগত সাফল্যের নয়, বরং এটি বাংলাদেশের নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপ্রেরণার একটি উদাহরণ।