চাঁদনি চক-গাউছিয়ায় জমজমাট ঈদ কেনাকাটা, মুখ ভার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১৪:১৮

ঈদের এখনো তিন সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও ঢাকার মার্কেটগুলোতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ঈদ কেনাকাটা।
শুরু হয়েছে রমজান মাস। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। ঈদের এখনো তিন সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও ঢাকার মার্কেটগুলোতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ঈদ কেনাকাটা। কোনো কোনো মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত না থাকলেও ভিন্ন চিত্র নিউমার্কেটে। সেখানে ক্রেতা না থাকায় অনেকটা মুখ ভার ব্যবসায়ীদের। তবে কয়েকদিন পর বেচাকেনা জমে উঠবে বলে আশা করছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
রমজান শুরুর পর প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নুরজাহান সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেটে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। মাঝেমধ্যে ক্রেতা দেখলে তাদের ডাকছেন দোকানের কর্মীরা। দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ গিয়ে পণ্য কিনলেও অনেকে ঘুরে দেখছেন। সবমিলিয়ে নিউমার্কেটে তেমনটা জমেনি ঈদ কেনাকাটা। এমন ক্রেতা দেখে সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা।
ওমর ম্যাচিং সেন্টারের বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, “শুক্রবার হিসেবে ঈদের চাপ শুরু হয়নি এখনও। তবে আজকের পর থেকে বাড়তে থাকবে। বেচাবিক্রি এখনও কম।”
ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির ম্যানেজার মো. ফিরোজ দেশকাল নিউজকে জানান, “এটি ঐতিহ্যবাহী একটি মার্কেট। সাধারণত সাপ্তাহিক শুক্রবার হিসেবে যে চাপ এখনও তা আছে। ঈদের কেনাকাটার জন্য এখনও ক্রেতার চাপ পড়েনি। তবে প্রতি রমজানের প্রথম শুক্রবারই এমন কম ক্রেতা থাকে। কারণ প্রথম রমজানগুলোতে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করে অনেকে। সেজন্য কম বের হয়। তবে ঈদ যত বাড়ে কেনাকাটাও বাড়তে থাকে।”
অন্যদিকে নিউমার্কেটের পাশের চাঁদনি চক ও গাউছিয়ায় জমে উঠেছে কেনাকাটা। থান কাপড় এবং গাউছিয়া মার্কেটের দোতলায় দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। থরে থরে সাজানো থান কাপড় থেকে পছন্দসই রং ও মাপ অনুযায়ী কাপড় কিনছেন ক্রেতারা। আর রেডিমেড কাপড়ের দোকানগুলোও কানায় কানায় পূর্ণ।
নিউমার্কেটে মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করেছেন পায়েল খান। তিনি বায়িং হাউজে কাজ করেন। পায়েল খান দেশকাল নিউজকে বলেন, “সন্তানের জন্য পোশাক কিনে এবার ঈদ মার্কেট শুরু করলাম। একে একে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে পছন্দসই পোশাক কিনে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। নিজের জন্য চাঁনরাতের আগে কিনব।”
ভিড় এড়াতে আগেভাগেই কেনাকাটা করতে আসা ব্যবসায়ী মোল্লা মোহাম্মদ করিম বলেন, “ঈদের আগে ভিড় থাকে প্রচুর। সেজন্য আগেভাগেই কেনাকাটা করতে এসেছি। এছাড়া এই সময়ে দামও অনেকটা সাধ্যের মধ্যেই থাকে। তাই কেনাকাটা শুরু করলাম আগেভাগেই।”
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে পোশাকে এসেছে নতুন নকশা। পরিবর্তন এসেছে পোশাকের কাটেও। দরদাম করে চলে যাওয়া ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিক্রেতারা কিছুটা হতাশ হলেও ক্রেতার বাড়তি চাপ উপভোগ করেছেন। তাদের আশা দু-একদিনের মধ্যে ক্রেতা বাড়বে।
নিউমার্কেটের একটি পোশাকের দোকান ড্রেসি ক্লাসির স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন রাজন দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “নিউ কালেকশন দেখতেই বেশিরভাগ ক্রেতা দোকানে ঢুকছেন। কিছুটা কম দামে পোশাক নিতে চাইছেন। তবুও কিছুটা বিক্রি বাড়ছে।”
ভারত-পাকিস্তানের পোশাকের আধিপত্য
প্রতিবারের মতো এবারও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পোশাকের আধিপত্য দেখা গেছে নিউমার্কেটে। তবে বাংলাদেশি পোশাকেরও কদর আছে। নিউমার্কেটের স্বপ্নীল ফ্যাশন ম্যাচিং সেন্টারের বিক্রেতা মো. সজীব বলেন, “মার্কেটে আগে শুধু ইন্ডিয়ার ড্রেস থাকত। এবার ইন্ডিয়ার তুলনায় পাকিস্তানি ড্রেস বেড়েছে। আর বাংলাদেশি লনের কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে। ঈদে থ্রি-পিস আইটেম বেশি কিনতে চায় কাস্টমাররা।”
চাঁদনি চকের আল্লাহর দান ফেব্রিকসে ৯ বছর ধরে কাজ করছেন বিক্রেতা মো. রায়হান। তিনি বলেন, “বারিশ থান কাপড় এবং পাকিস্তানি সেহেলি কটন বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সিল্ক আর জর্জেট তো আছেই। এবার মাশশাল থ্রি-পিস ও রাংগিরি রাখী থ্রি-পিসও ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
চাঁদনি চক থেকে থ্রি-পিস কিনেছেন শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, “কেনাকাটার জন্য চাঁদনি চকের চেয়ে ভালো কিছু হয় না। যেমন কম দামে ভালো মানের থান পাওয়া যায়, পাশাপাশি ভ্যারাইটির থ্রি-পিসও পাওয়া যায়। আর এগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না, পুঁতি, চুমকি, পাথর ও জরি, লেস, ফিতাও পাওয়া যায়।”
থান কাপড় রোজার আগেই বিক্রি বেশি হয় বলে ক্রেতারা জানান। এর কারণ দর্জিরা রোজা শুরুর পরপরই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয়। রূপালি থান কাপড়ের বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, “রোজা বাড়লে থান কাপড়ের বিক্রি কমে যায়। কারণ দর্জিদের চাপ রোজা শুরু হলেই বাড়তে থাকে। তারা অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয় আর ওদিকে রেডিমেড কাপড়ের বিক্রি বাড়ে।”
গাউছিয়া মার্কেটের দোতলায় তৈরি পোশাক বিক্রির ধুম দেখা গেছে। রেডিমেড লম্বা গাউন, বারবি গাউন, সারারা, গারারা, অরগাঞ্জাসহ বাহারি সমাহারের দেখা মেলে।
চাহিদার শীর্ষে সারারা ও গারারা
মার্কেটজুড়েই এবারের ঈদেও মোগল আমলের পোশাক সারারা ও গারারার দাপট দেখা গেছে। হালফ্যাশনে যোগ হওয়া এই দুই পোশাক সুতি ও সিনথেটিক- দুই ধরনের কাপড়েই মেলে। ফলে ঈদে চৈত্রের খরতাপেও আরামের পাশাপাশি দেবে গর্জিয়াস লুক।
গারারা ও সারারা মধ্যে অল্পবিস্তর পার্থক্য রয়েছে। গারারায় কামিজের দৈর্ঘ্য থাকে হাঁটু পর্যন্ত। আর সালোয়ারটি হাঁটু থেকে কুঁচি শুরু হয়। অন্যদিকে সারারার কামিজ একইরকম হলেও সালোয়ার থেকে কুঁচি শুরু না হয়ে প্যান্ট বা ফার্সি কাট শুরু হয় যা দেখতে অনেকটা ঘাগরার মতো দেখায়।
ইকবাল ফ্যাশনের বিক্রেতা নিরঞ্জন সরকার বলেন, “গারারা, সারারা, শিফন, কোটা থ্রি-পিছ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর কাপড় ভারত থেকে নিয়ে দেশে সেলাই করে বিক্রি করা হয়।”
ঈদের পোশাকে চাহিদার শীর্ষে থাকা আরও একটি পোশাক অরগাঞ্জা। এর উদ্ভব চীনে। তবে চীনের পাশাপাশি ভারতও এর বড় রপ্তানিকারক। গরমেও এর জনপ্রিয়তার কারণ এই ফেব্রিকসটি সুতি কাপড়ের মতো বায়ু শোষণের ক্ষমতা অনেক বেশি। পাশাপাশি সিল্ক থেকে তৈরি হওয়ায় অনেক হালকা এবং সহজে কুঁচকে যায় না।
সারারা ও গারারাগুলোর দাম পড়বে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। গাউন ২৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাপড়ের ধরণভেদে অরগাঞ্জা গজ ৪০০ থেকে শুরু। তবে ফুলেল নকশার অরগাঞ্জা কাপড়ের দাম ৬০০ টাকা। এছাড়া পুঁতি, চুমকি ও জরি কাজের অরগাঞ্জা কাপড়ের গজ পড়বে ১৫০০ টাকা। কারচুপি নেটের প্রতি গজ ৪ হাজার টাকা, বারিশ থান কাপড়ের গজ প্রতি ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি সেহেলি কটন গজ প্রতি ৪০০ টাকা, এছাড়া মাশশাল থ্রি-পিস ১৬০০ টাকা ও রাংগিরি রাখী থ্রি-পিস ২ দুই হাজার টাকা।